খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, আপনার কথা বলার স্বাধীনতা আছে। তাই বলে আপনি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে কিনা জানা নেই বলে বক্তব্য দেবেন? এ ধরনের বক্তব্য রাবিশ। এগুলো প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে হবে। জাতির সত্য ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করার অধিকার কারো নেই। এই দুঃসাহস হয় কিভাবে? এটা কোন গণতন্ত্র নয়।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বেগম জিয়ার নাম উল্লেখ না করে মিজানুর রহমান বলেন, কতগুলো বিষয় আছে ঐতিহাসিক সত্য। সেই স্বীকৃত মিমাসিংত বিষয়কে বিতর্কিত করা দূরভিসন্ধিমূলক। জাতীয় স্বার্থে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, জনগণের ঐক্যের স্বার্থে এগুলোকে বিতর্কিত করা উচিৎ নয়। যে সংবিধানে ৩০ লাখ শহীদের কথা লেখা আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংবিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। যিনি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন তিনি সংবিধানের বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বলেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. ইরশাদ কামাল খানের সভাপতিত্বে আইন অনুষদের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন নেপালের সাবেক এটর্নি জেনারেল ড. যুবরাজ সাংগ্রুলা, আইন অনুষদের সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম নূরজ্জামান, ব্যবসায় অনুষদের প্রধান অধ্যাপক ড. এম আইয়ূব ইসলাম, লিবারেল আর্টস অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ।
মিজানুর রহমান বলেন, প্রচলিত আইন ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করছে। আইন হচ্ছে ধনীবান্ধব আর দরিদ্র বিরোধী। আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছি। গরিব মানুষ দুধের মত পবিত্র। সেই গরিব মানুষকে যদি আইন রক্ষা করতে না পারে তাহলে আইন, আইনজীবী ও আইন শিক্ষা সব কিছু প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মক্কেলের মাথায় আঘাত করে কিভাবে টাকা আদায় করব, সেই শিক্ষা গ্রহণ করবে না। আমি সেই শিক্ষাকে ঘৃণা করি। মামলাবাজ হবার জন্য আইনজীবী হওয়ার দরকার নেই। যিনি গরিব মানুষের সেবা আর সংগঠিত করতে পারবেন তার জন্যই এই পেশা।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নিয়ে যখন দেখি কোন কোন বিদেশি সংস্থাও সরকারকে বলে- যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তুলে নাও। ব্যক্তি মামলা করলে সেগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতা কি রাষ্ট্র কিংবা সরকারের আছে? তাদের কথা শুনলে মনে হবে রাষ্ট্র কোন ব্যক্তিকে দিয়ে মামলাটি করিয়ে নিচ্ছে। এই ধারণা তো অমূলক। আমি বলব, যারা এখন এত উৎসাহ দেখাচ্ছেন, একই উৎসাহ লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে দেখালেন না কেন? তিনিও তো একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্য নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তখন তাকে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছিল সেটা নিয়ে আপনারা প্রশ্ন তুললেন না কেন?
তিনি বলেন, একটি বিশেষ সময়ে পত্রিকায় কিছু অসত্য, বিকৃত তথ্য দেয়া হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদক, উনি ক্ষমা চেয়েছেন। এটা উনার মহত্ত্ব। উনার প্রশংসা করছি। কিন্তু বিকৃত তথ্যের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিকার কী? এই বিষয়টা আইনের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব