ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপন্থি কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেছে প্রো-ভিসিপন্থি কর্মকর্তারা। এতে ভিসিপন্থি ৫ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহদের মধ্যে মোর্শেদ নামের এক কর্মকর্তার অবস্থা আশংকাজনক। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উভয় গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে বলে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের অপসারণ দাবি করে গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করে প্রো-ভিসিপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাদের কর্মসূচির পাল্টা জবাব দিতে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১১টি অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় ভিসিপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তারা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে এ মানববন্ধন হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ভিসিপন্থিদের কর্মসূচির প্রতিবাদে একই সময়ে সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে 'আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' ব্যানারে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেয় প্রো-ভিসিপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের একাংশ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে ভিসি ও প্রো-ভিসি সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।
আজ সকাল থেকেই প্রো-ভিসিপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের একাংশ ডায়না চত্বরের পাশে অবস্থান নেয়। এসময় ভিসি সমর্থক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় টেন্টে অবস্থান নেয়। জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভিসিপন্থি কর্মকর্তা মোর্শেদ খানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মানববন্ধনে যোগদানের জন্য প্রশাসন ভবন থেকে বের হলে প্রো-ভিসিপন্থি কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের একাংশ তাদেরকে ধাওয়া করলে তারা প্রশাসন ভবনের মধ্যে দৌড়ে গিয়ে এস্টেট শাখায় অবস্থান নেয়। এসময় প্রো-ভিসিপন্থি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন খান, প্রো-ভিসি পিএস আব্দুল হান্নান, সোহেল রানা, চ্যাকা জাহাঙ্গীর হোসেন, পরিবহন শাখার আসাদুজ্জামান মাখন ও রুহুল আমিন, গিয়াস উদ্দিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের রাশেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রো-ভিসি পন্থী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শতাধিক বহিরাগতদের নিয়ে ভিসিপন্থিদের উপর হামলা করে। এতে ভিসিপন্থি কর্মকর্তা মোর্শেদ খান, এস্টেট শাখার হারুন অর রশিদ, ভিসির পিএস মনিরুল ইসলাম, রেজিস্টারের পিএস আনোয়ার, পরিকল্পনা অফিসের রেজাউল করিম রেজা আহত হন। আহতদের মধ্যে মোর্শেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হামলা ঘটনার পরে বেলা ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. শাহিনুর রহমানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করে ভিসিপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এদিকে কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার এস এম আব্দুল লতিফ বাদি হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে ইবি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোনিত কুমার গায়েন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা তা নথিভুক্ত করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘যেহেতু উভয় গ্রুপের মধ্যে একটু মতবিরোধ হয়েছে। তাই সবাই যাতে নির্বিঘ্নে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় সেজন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে দুটি পৃথক প্রোগ্রাম ছিল। আর এতে যোগদানকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাম্পাস এখন নীরব রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/৪ এপ্রিল ২০১৬/শরীফ