গত বারের মতো এবারও রমজানে চিনির বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। গত দুই দিনেই পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। চাহিদার পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুদ থাকার পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যটির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত বুধবার প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ২২৯০-৩০০০ টাকা দরে। সপ্তাহের শুরুতে শনিবার সকালেও প্রতিমণ চিনির দাম ছিল ২১৮০-২১৮৫ টাকা। সেই হিসেবে মাত্র দুই দিনেই নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যটির দাম মণে প্রায় ১২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজারের চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চিনির মিল মালিক ও তাদের ডিলার-এজেন্টদের কারসাজিতেই দুইদিন আগে থেকেই পণ্যটির বাজার অস্থির হয়েছে। অথচ প্রতিটি মিল ও এজেন্টদের গুদামে পর্যাপ্ত চিনি মজুদ রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের চিনির মোট চাহিদার সিংহভাগই যোগান দেয় সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইগলু, ইউনাইটেড ও দেশবন্ধু গ্রুপ। তবে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এস আলম সুগারের সরবরাহ ও বিক্রি বেশি। মাঝে মাঝে অল্প পরিমান সিটি গ্রুপের তীর ও মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্রান্ডের চিনি বাজারে আসে।
চিনির সরবরাহ সংকটের বিষয়ে মেঘনা ও সিটি গ্রুপের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আর এম ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠান দু’টি। কারখানা সংস্কারের নামে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। এস আলম চিনির প্রধান এজেন্ট চট্টগ্রামের মীর আহমদ সওদাগর থেকে বাজারের ব্যবসায়ীরা নগদে ও এসও’র মাধ্যমে চিনি ক্রয় করেন। এরপর এসও’র কাগজপত্র নিয়ে মিল গেট থেকে চিনি সরবরাহ নেন। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে মিল গেটে ট্রাক দাঁড় করিয়ে চিনির সরবরাহ কমিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কোম্পানিগুলোর এজেন্ট-ডিলাররা মিল থেকে পণ্যগুলো সরাসরি বাজারে না এনে গুদামে নিয়ে মজুদ করছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এভাবে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আহাদ ট্রেডিং, এম হোসেন, শফি ট্রেডার্স, এমজি ট্রেডার্স, আর এম ট্রেডিং, আলম ট্রেডিং, লিটন ট্রেডিং, দীন সিন্ডিকেট, দীন এজেন্সি, ন্যাশনাল ট্রেডিং, নিউ মাসুদ, আলতাফ ব্রাদার্সসহ ২০-৩০ প্রতিষ্ঠানের গুদামে পর্যাপ্ত চিনি মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে কোন কোনটির গুদামে হাজার টনের উপর চিনি মজুদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস’র তথ্যমতে, গত অর্থ বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ পর্যন্ত) ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টন চিনি আমদানি হলেও শেষ তিন মাসে প্রায় আট লাখ ১০ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুম ও রমজানে পণ্যটির বাড়তি চাহিদা থাকায় গত তিন মাসে পণ্যটির কয়েকগুন বেশি আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে চিনির চাহিদা প্রায় ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি চিনি মিলগুলো প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি সরবরাহ করে। প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে মাস ভিত্তিক চাহিদার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চিনির বাজারে কারসাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এদিকে পাইকারি বাজারের প্রভাবে গত কয়েকদিনে খুচরায় পণ্যটির দাম ৫-৭ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫৭-৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ঠেকেছে ৬৫ টাকায়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার