১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট শের-ই বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল বরিশা সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল। প্রতিদিন হাসপাতালের ২৭টি আন্তঃওয়ার্ডে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে দেড় হাজারেরও বেশী। রোগীর পরিচর্যার জন্য গড়ে স্বজন থাকে আরো প্রায় ৬ হাজার। এছাড়া বর্হিবিভাগ গুলোতেও প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নেয় আরো অন্তত ৬ হাজার রোগী। বিপুল সংখ্যক রোগী ও তাদের স্বজনদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য ও খাবার পানির চাহিদা মেটাতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ।
রোগীর স্বজন রিমা বেগম ও বিলকিস বেগম জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ যতটুকু পানি দিচ্ছে, তার মধ্যে ময়লা-দুর্গন্ধ। ওই পানি মুখে নেয়ার উপায় নেই। আবার সার্বক্ষণিক পানিও থাকেনা হাসপাতালে। অনেক সময় টয়লেটে ব্যবহার করার পানিও পাওয়া যায়না হাসপাতালের সরবরাহ পানির লাইনে।
তাই হাসপাতাল চত্ত্বরে স্থাপন করা টিউবওয়েলই রোগী ও তাদের স্বজনদের সুপেয় এবং ব্যবহার্য পানির একমাত্র ভরসা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এতবড় হাসপাতালের হাজার হাজার রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ পানির জন্য সচল টিউবওয়েল রয়েছে মাত্র একটি। এ কারণে দিনরাত সব সময়ে একমাত্র টিউবওয়েলে পানি নিতে দির্ঘ লাইন পড়ে রোগীর স্বজনদের। অনেক সময় আগে-পরে পানি নেয়া নিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে ঝগড়া, এমনকি মারামারির ঘটনাও ঘটছে। এক কথায় পানি নিয়ে কাড়াকাড়ির চিত্র প্রতিদিন।
রোগীর স্বজন মো. সুলায়মান জানান, যে টিউবয়েলটি সচল রয়েছে, সেটি দিয়েও তেমন পানি উঠছেনা। সেটি চেপে পানি উঠাতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তাদের।
আব্দুর রহিম নামে আরেক রোগীর স্বজনের অভিযোগ, একমাত্র টিউবওয়েলে ভীড় দেখে অনেকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের টিউবওয়েলে পানি আনতে যায়। কিন্তু কোয়ার্টারে পানি আনতে গেলে সেখানকার বাসিন্দাদের হাতে নাজেহাল হতে হয় বলে তার অভিযোগ।
সুপেয় পানি সংকটের কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, রোগীর খাবার পানির চাহিদা মেটানোর জন্য হাসপাতাল চত্ত্বরে ৪টি টিউবওয়েল রয়েছে। কিন্তু ৩টি টিউবওয়েল অকেজো। একমাত্র সচল টিউবওয়েলে রোগী ও তাদের স্বজনদের পানির চাহিদা মিটছেনা।
সচল টিউবয়েল থেকে বৈদ্যুতিক মর্টারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে একটি রিজার্ভ ট্যাংকিতে রেখে সেখান থেকে টেপ কল দিয়ে রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানোর কথা বলে হাসপাতালের পরিচালক। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ করেছেন বলেও পারিচালক জানিয়েছেন।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওসমান গনি বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। এ অবস্থায় নতুন টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও সমস্যার সমাধান হবেনা। হাসপাতালের পরিচালকের সাথে আলোচনা মাধ্যমে রোগীদের সুপেয় পানি সংকটের সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মেডিকেল চত্ত্বরে ৪টি টিউবওয়েল থাকলেও পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় ৩টি টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছেনা। এ কারনে একটি টিউবওয়েল থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাড়াকাড়ি-হুড়োহুড়ি নিত্যদিনের চিত্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্ত্বরে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন