চট্টগ্রাম বন্দরে আনা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমদানি নিষিদ্ধ রাসায়নিক মিশ্রিত ২ হাজার টন বিষাক্ত খাবার লবণ আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। আটক চালানগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। নগরের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমির ট্রেডিং কর্পোরেশন এবং মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইডের (খাবার লবণ) চালানটি আমদানি করে।
আজমির ট্রেডিং এর পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মানিক ব্রাদার্স গত ২১ মে ও ১১ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিলঅফএন্ট্রি দাখিল করে। আশা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রূপালী ট্রেডার্স ১৫ জুন বিঅফএন্ট্রি দাখিল করে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। জানা যায়, চালানগুলোর বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় গত ২০ জুন খালাস প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত করা হয়। এসব চালানের শুল্কায়ন যোগ্য মূল্য ১ কোটি ৬৮ কোটি টাকা। শুল্ক কর প্রায় দেড় কোটি টাকা। চালানগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, চালানগুলো আটকের পর নমুনা সংগ্রহ করে কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এতে সোডিয়াম ক্লোরাইডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে চালানের নমুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে পাঠানো হয়। ফলিত রসায়ন বিভাগ থেকে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন সোমবার শুল্ক গোয়েন্দা দফতরে পাঠায়। তিনি বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটক নমুনায় ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সোডিয়াম সালফেট এবং ১ শতাংশ আর্দ্রতার উপস্থিতি রয়েছে। এগুলো মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড'র চালান। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম সালফেটও মিশ্রিত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ অনুযায়ী সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি নিষিদ্ধ। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আদেশ না মেনে সোডিয়াম সালফেট ঘোষণায় সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে সোডিয়াম সালফেট মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি ও বাজারজাত করে আসছে। এ ব্যাপারে কাস্টমস আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাসহ ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আমদানিকারক ক্লিনিং এজেন্ট ঘোষণা দিয়ে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করেছেন বলে আমদানি দলিলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইডের উপস্থিতি প্রমাণ করে আমদানি নিষিদ্ধ খাবার লবণ অবৈধভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিলো।
ড. মইনুল খান বলেন, সোডিয়াম সালফেট রাসায়নিক পদার্থটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি মূলত ডিটারজেন্ট তৈরিতে এবং ড্রাইং এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ফার্মাসি বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ভেজাল হিসেবে এটি শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি ফেইলিওরসহ নারী ও শিশুদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার