জেলা প্রশাসন পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপ ‘বরিশাল প্রোবলেম এন্ড প্রোসপেক্ট’ পেজে গত ৯ জুলাই এই ছবিটি (সংযুক্ত) আপলোড করে জহির উদ্দিন ফিরোজ নামে এক ব্যবসায়ী নাগরিক জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, এটি বরিশাল ভায়া লাকুটিয়া বাবুগঞ্জ সড়ক। সড়কের দ্বিতীয় কিলোমিটারের বর্তমান চেহারার ছবি এটি। জেলার ৪টি বাবুগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার লাখো মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন সড়কটি দীর্ঘদিনের সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে নাকাল ওই নাগরিক জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করেছেন, তিনি (জেলা প্রশাসক) যেন এলজিইডি’র নিয়ন্ত্রণ থেকে সড়কটির নিয়ন্ত্রণ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ কাজে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক যেন স্থানীয় (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এমপি শেখ টিপু সুলতানের সহায়তা নেন। সড়কটি নির্মাণে এমপি’র নিজ দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি সুপারিশ করবে বলেও ওই নাগরিক আশা করেন।
জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এক নাগরিকের দেওয়া ওই পোস্টটি চিঠি আকারে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট দফতর দ্রুত সড়ক সংস্কার কাজ করবেন বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের রহমতপুর থেকে বাবুগঞ্জ হয়ে, মুলাদী, হিজলা (এরপর নৌপথে মেহেন্দিঞ্জ) সড়কটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। বরিশাল নগরীর মরকখোলা থেকে লাকুটিয়া বাজার এবং বাবুগঞ্জ হয়ে মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে যেতে অনেক সংক্ষিপ্ত পথ এবং সময়ও কম লাগে। এ কারণে নগরী থেকে লাকুটিয়া বাজার হয়ে বাবুগঞ্জ সড়কে দিন দিন বাড়ছে মানুষের চলাচল। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে শত বাস-ট্রাক, থ্রি হুইলারসহ সব ধরনের যানবাহন। কিন্তু সড়কটির নগরীর অংশের সাধুর বটতলা থেকে বাঘিয়া গরুরহাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এবং বটতলা থেকে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দের। এতে চলা দায় হয়ে পড়েছে যাতায়াতকারীদের।
সংশিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সড়কের নগরী অংশের দেড় কিলোমিটার সিটি করপোরেশন এবং নগরীর পরবর্তী অংশ থেকে বাবুগঞ্জ কলেজ মোড় পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এলজিইডি। নগরীর সীমানা ছাড়িয়ে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কটি আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকলেও ৬ বছর আগে সড়কের দায়িত্ব এলজিইডি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
বাবুগঞ্জ থেকে ওই সড়কে প্রতিদিন বরিশাল নগরীতে যাতায়াত করা একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সন আরিফ হোসেন বলেন, বরিশাল-লাকুটিয়া-বাবুগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে সব সময় পানি থাকায় বোঝা মুশকিল গর্তটি কত গভীর। প্রতিদিন ওইসব গর্তে ভারি যানবাহনের চাকা আটকে যায়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য দুর্ঘটনা এড়াতে ইদানিং তিনি বিকল্প পথে চলাচল করছেন বলেও জানান।
হিজলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট নুরুল আলম রাজু বলেন, সড়কের নগরী অংশের দেড় কিলোমিটারের অবস্থা ভয়াবহ। বাবুগঞ্জ অংশের অবস্থাও খুবই খারাপ। চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় এখন মাহেন্দ্র আলফা, অটোরিকশাসহ হালকাযানও বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। এখন বাস-ট্রাক চললেও ‘জানে আর জান থাকে না’ বলে তিনি জানান।
ফিরোজ, আরিফ কিংবা রাজু নয়, বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা এই সড়কটি হাজার হাজার মানুষের কাছে পরিণত হয়েছে ‘অভিশাপে’।
এলজিইজি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমীন খান বলেন, নগরীর মরকখোলা পোল থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জ কলেজ গেট পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়কের ১৫ কিলোমিটার এলজিইডি মেইটেন্যান্স করে। গত অর্থ বছরে নগরীর সিমানার পর থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের বেশিরভাগ সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। বাকী এক-দেড় কিলোমিটার চলতি অর্থ বছরেই সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, সড়কের বরিশাল নগরী অংশের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সিটি করপোরেশনের ‘ক’ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান স্বীকার করেন মরকখোলা পোল থেকে বাবুগঞ্জ সড়কে নগরী অংশের প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা একেবারে করুন। তিনি বলেন, জনগনের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কের ওই অংশ সংস্কার-মেরামতের জন্য দুটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। বর্ষার কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছে না। এছাড়া এই কাজের বিপরীতে তহবিল না থাকায় ঠিকাদার সংস্কার কাজে বিলম্ব করছেন। সিটি মেয়র মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ এনে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১২ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব