রাজধানীর খিলখেতের নিকুঞ্জ এলাকার থেকে গ্রেফতার হওয়া আনোয়ার নামের একজনকে প্রায় দেড় মাস আগে সাভার থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবার। এমনকি আটক হওয়ার পরের দিনই আনোয়ারের পরিবার এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। পরে ওই ডায়েরীর তদন্তকারী কর্মকর্তা (এস আই) রফিকুল ইসলাম আনোয়ারের মোবাইল ফোনের কল লিষ্টের সূত্র ধরে তাকে ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে বলেও তার পরিবারের কাছে নিশ্চিত করে।
এব্যাপারে সোমবার সকালে সাভার মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আনোয়ার নিখোঁজের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী দায়ের করা হয়। তিনি ওই ডায়েরীর তদন্ত শেষে আনোয়ার ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে মিন্টু রোডে রয়েছে বলে নিখোঁজের পরিবারকে জানিয়ে দেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিখোঁজ আনোয়ারকে খুজে বের করার জন্য পুলিশ তার মোবাইল ফোনের কল লিষ্ট বের করে। তার একটি প্রিন্ট কপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসে পৌঁছেছে। সেখানে আনোয়ারের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশনে দেখা যায়, ২৩, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্বরনী, ওয়ার্ড ৩৮, মগবাজার, রমনা, ঢাকা।
রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডটি মিন্টু রোড ও বেইলী রোডসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত। যা বর্তমানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে পরিচিত।
আনোয়ারের পরিবার ও একাধিক স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আনোয়ার হেমায়েতপুরের যাদুরচর এলাকায় দশ বছরেরও বেশি সময় যাবৎ গাড়ির ওয়ার্কশপের কাজ করছেন। আনোয়ার ওয়ার্কশপ নামের তার একটি গ্যারেজ রয়েছে। এখানে তার সাথে তার ছোট ভাই রেজাউল করিমও কাজ করেন। আনোয়ার নিয়মিত তার ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তাকে অন্য কোন আড্ডা বা গ্যারেজ বন্ধ রাখতেও দেখেনি স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আনোয়ার এলাকায় সবার সাথেই মিশতেন। তার চলা-ফেরায়ও কারও কখনো কোন সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি। আনোয়ারের মতো একজন ব্যক্তি এভাবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়বেন এটা তারা কখনো ভাবতেও পারেনি।
পরিবার ও গত পহেলা আগষ্ট সাভার মডেল থানা দায়ের করা জিডি (নং ১৩) সূত্রে জানা গেছে, আনেয়ার হেমায়েতপুর এলাকায় প্রতিদিনের মতো ৩১ জুলাই সোমবার সকাল থেকেই কাজ করছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে গাড়ি ঠিক করার কথা বলে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজ করেও আনোয়ারের সন্ধান না পেয়ে পরের দিন তার ভাই আলী হোসেন এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন।
আনোয়ারের বড় ভাই আলী হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাদের গ্রামের বড়ি শরীয়তপুর এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ার মেজো। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে তাদের লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। ১২ বছর বয়সেই আনোয়ারকে গ্যারেজে কাজ শেখার জন্য দিয়ে দেয়। সেখানে কাজ শেখার পরে হেমায়েতপুরের যাদুরচর এলাকায় অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে ১০ বছরেরও বেশী সময় যাবৎ নিজেই গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ চালু করেন। তার ছোট ভাই রেজাউল করিমও তার সাথে কাজ করেন।
আলী হোসেন জানান, ডিবি পুলিশ তার ভাইকে গ্যারেজ থেকে তুলে নিয়ে যায় গত ৩১ জুলাই। তারা দুই ভাই গ্যারেজে কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেতেন। জঙ্গি হওয়া তো দূরের কথা, এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাও নেই। ডিবি পুলিশ তার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনার পর পরই তার মা স্ট্রোক করেন। গত চার দিন আগে তার মা মারা যায়। এর পরের দিনি তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন তার ভাইকে ডিবি পুলিশ রাজধানীর ক্ষিলখেত এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।
বিডি প্রতিদিন/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল