জেল থেকে দুর্ধর্ষ আসামি মিজানুর রহামন মাতুব্বরের উধাও হওয়ার ঘটনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে স্বশরীরের হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার আদালতের সেই আদেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ভারপ্রাপ্ত বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু মামলা-৫০০/১৫ নম্বর মামলার ১১ আসামি আদালতে হাজির থাকলেও প্রধান আসামি মিজানুর রহমান মাতুব্বরকে কারা কর্তৃপক্ষ ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করে নাই। কারা কর্তৃপক্ষ এই আসামিকে কেন হাজির করে নাই তার কোন ব্যাখ্যাও দেন নাই। ইহা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত, যা তার কর্তব্যকর্মে অবহেলার শামিল।
কর্তব্যকর্মের এরুপ অবহেলার কারণে কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর কারা তত্ত্বাবধায়ককে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া গেল।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, এ মামলাটি হাইকোর্টের আদেশে ছয় মাসের মধ্যে নিস্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই আসামি পক্ষের বাঁধার কারণে অভিযোগ গঠনের জন্য ১৩টি ধার্য তারিখ অতিবাহিত হয়েছে প্রতীয়মান হয়।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে আট বছর বয়সী শিশু অপহৃত হয় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে। শিশুটির বাবা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তার সন্তানকে ফেরত পান চারদিন পর। এ ঘটনায় শিশুটির মামা এনায়েত উল্ল্যাহ বাদী হয়ে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার ১২ দিন পর র্যাব অভিযান চালিয়ে ওই অপহরণে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করে মুক্তিপণের টাকাসহ অন্যান্য মালামাল। পরে আসামি মিজানুরসহ অন্যরাও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, ওই শিশু উত্তরার একটি মাদ্রাসায় পড়ে। তাকে অপহরণের জন্য প্রায় এক বছর ধরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও তথ্য সংগ্রহ করেছিল অপহরণকারীরা। তারা নিয়মিত শিশুটির গতিপথ অনুসরণ করে। যে মাদ্রাসায় ওই শিশুটি পড়ে, সেই মাদ্রাসায় পরিচিত একজনের বাচ্চাকে ভর্তিও করে অপহরণকারীরা। পরে শিশুটি গাড়িতে করে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে বনানী উড়ালসড়কের নিচে অপহরণকারীরা তিনটি গাড়ি নিয়ে ওই গাড়ির গতিরোধ করে। নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে শিশুটি, ওই গাড়ির চালক ও শিশুটির তত্ত্বাবধানকারীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা।
ওই রাতেই গাড়ির চালক ও তত্ত্বাবধানকারীসহ বিমানবন্দর এলাকায় ফেলে রেখে আসে অপহরণকারীরা। পরে শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। চার দিন দর-কষাকষির পর দুই কোটি টাকায় রফা হয়। এরপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা অপহরণকারীরা শিশুকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়।
পরে ঘটনার তদন্ত করে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু এ মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাবার অভিযোগে আরো দুই আসামিকে যোগ করে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এই ১২ আসামির প্রধান আসামি হলেন মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বর। এ আসামি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে আদালত থেকে কোন জামিন পাননি।
তবে তাকে কারাগারে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কোন উপায়ে মিজানুর কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে, বা তাকে কেন পাওয়া যাচ্ছে না, কারাগার থেকে কীভাবে উধাও হলো— এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব নেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে মিজানুরের লাপাত্তা হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর কারা কর্মকর্তারা উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ইমরান জাহান/ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭