পুলিশি হয়রানি বন্ধ, অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ, পরিবহন ব্যবসায়ী মো. হারুন খুন এবং পাইকারি ও খুচরা ওষুধের দোকানে প্রশাসনের হয়রানির প্রতিবাদসহ ‘ত্রিমুখী’ ধর্মঘটের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ জনজীবনের চিত্র লক্ষণীয়। সেই সুযোগে সোমবার কিছু সুবিধাভোগী গাড়ি চালক যাত্রীদের কাজ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ারও অভিযোগ তুলেছেন একাধিক যাত্রী।
সকাল ৬টা থেকে দুর্ভোগে পড়েন অফিসমুখো মানুষও। শত শত মানুষ বেশি ভাড়ায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশায় কর্মস্থলে গেলেও অনেককে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গাড়ির সংকট দেখা গেছে বেশী। এর মধ্যে বাদুরতলা, চকবাজার, আন্দরকিল্লাহ, মুরাদপুর, কাজীর দেউড়ি, লালখানবাজার, টাইগারপাস, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদসহ পুরো নগরীতেই অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জটলা দেখা গেছে।
পরিবহন মালিক সূত্রে জানা যায়, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে অনির্দিষ্টকালের গণপরিবহন ধর্মঘট চলছে গত রবিবার থেকে। পরিবহন ব্যবসায়ী মো. হারুন (৪০) খুনের প্রতিবাদে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন হয়েছে নগরীর কদমতলী-শুভপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। মালিক-শ্রমিকরা সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। ওই এলাকায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল। একই সাথে প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন বন্ধ রেখে সোমবার সকাল থেকে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে মালিক-শ্রমিকরা দফায় দফায় মিছিল করেছেন উক্ত এলাকায়।
অন্যদিকে র্যাব এবং ওষুধ প্রশাসনের হয়রানির অভিযোগ এনে ধর্মঘট পালন করছেন চট্টগ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় আড়াই হাজার পাইকারি ও খুচরা ওষুধের দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চকবাজারের আজম নামে এক যাত্রী বলেন, ধর্মঘটের কারণে দাঁড়িয়ে আছি এক ঘণ্টা হলো। সুযোগ পেয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে ২০ টাকার রিকশা ভাড়া ৫০ টাকা দাবি করছে। ৬০ টাকার সিএনজি অটোরিকশাভাড়া ১২০ টাকা চাচ্ছে। সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে বাড়তি ভাড়ায়ও গাড়ি মিলছে না।
ওষুধ কিনতে আসা কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আধঘণ্টা ধরেই হাজারী গলির প্রবেশ মুখ থেকে শেষ পর্যন্ত সব ফার্মেসিতে গিয়েছি। কিন্তু সব দোকানেই তালা ঝুলতে দেখেছি। ছোট বোনের সিজারিয়ান অপারেশন; চিকিৎসক অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম লিখে দিয়েছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখি সব দোকানই বন্ধ। ব্যবসায়ীরা নিজেদের দাবি আদায়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের এভাবে ভোগান্তি ফেলতে পারেন না। দোকান বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’ ওষুধ ব্যবসায়ীদের হঠাৎ এমন ধর্মঘটে ভোগান্তির অন্ত ছিল না অনেক রোগীর স্বজনসহ সাধারণ মানুষদের।
মুরাদপুর এলাকা থেকে আসা হাফেজ আহমেদ নামের খুচরা ওষুধ বিক্রেতা বলেন, আকস্মিকভাবে নগরীতে ওষুধের দোকান বন্ধ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের মার্কেট হাজারী লেইনে এসে ওষুধ না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে। আমরা সাধারণ খুচরা দোকানগুলোও বন্ধ থাকায় রোগীর চাহিদা মোতাবেক ওষুধ নিতে পারছি না।
চট্টগ্রাম মেট্টো গণপরিবহন মালিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন- বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পুসহ সব ধরনের গণপরিবহন ধর্মঘটের আওতায় রয়েছে। আমাদের পরিষদের অধীনে দেড় হাজারের বেশি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি দাবি আদায়ের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করবে না। কিছু গাড়ির কারণে প্রশাসন আমাদের গাড়ির উপর হয়রানী শুরু করেছে। এখন তাদের কারণে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ১১ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তবে আলোচনা সাপেক্ষে এ পরিবহন ধর্মঘট স্থগিতের কথা বলা হলেও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলছে বলে জানা গেছে।
আন্তঃজিলা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউর রহমান টিপু বলেন, ব্রোকাররা বলেছেন তারা আজ গাড়ি বুকিং দেবেন না। আমরা এটাতে মৌন সম্মতি দিয়েছি। যেহেতু একটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, খুনিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তো আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। অঘোষিতভাবেই এ ধর্মঘট চলবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক আশীষ আচার্য বলেন, রবিবার নগরীর বহদ্দারহাটে হক মার্কেটের ওষুধের দোকানগুলোতে র্যাব এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালায়। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই অভিযানের খবর পেয়ে রাতেই জরুরি বৈঠকে হয়রানির প্রতিবাদে মহানগরীর পাইকারি ও খুচরা ওষুধের দোকানগুলো আমরা ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে রোগীদের কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার দোকানগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/০৫ ডিসেম্বর ২০১৭/এনায়েত করিম