বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে পরপারে চলে গেলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে শোকে কাতর তার নির্বাচনী এলাকা খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) সহ খুলনাবাসী।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি----রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে, নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী খোদেজা রশিদী এবং ছোট মেয়ে তুর্কি পাশে ছিলেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা দীর্ঘদিন কিডনী রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি শ্রমিক লীগ নেতা আলম হাওলাদারের দেয়া কিডনী প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে আসেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তিনি আবারও অসুস্থ হলে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। ২/৩দিন ধরে তিনি বেশি অসুস্থ ছিলেন।
খুলনা জেলা আ'লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, সুজার একমাত্র ছেলে এসএম খালেদীন রশিদী সুকর্ন বাবার মরদেহ আনতে শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখান থেকে কবে নাগাদ মরদেহ দেশে আসবে সেটি সুকর্ন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তেরখাদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু বলেন, সুজা ভাইজান ছিলেন আমাদের রাজনৈতিকভাবে অভিভাবক। রাজনৈতিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায় হয়েছে, আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
১৯৫৩ সালের ২ মার্চ বাগেরহাটের ফকির হাটে জন্মগ্রহণ করেন এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। ১৯৭৭ সালে প্রথম পৌর কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই একই সময় বর্তমান নবনির্বাচিত কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকও পৌর কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে খুলনা-২ থেকে এমপি নির্বাচন করেছিলেন মোস্তফা রশিদী সুজা। ১৯৯১, ৯৬ ও ২০১৪ সালে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই জননন্দিত নেতা। ১৯৯৬ সালে হুইপ ছিলেন।
১৯৯১ সাল থেকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮৬ সালে সাংসদ নির্বাচন করাকালীন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৬ সালের পর দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন।
১৯৭২ সালে শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়াচক্র গঠনকালে ইলিয়াস চৌধুরি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মোস্তফা রশিদী সুজা প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ইলিয়াস চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি সভাপতি হন আবাহনী ক্লাবের।
খুলনা নাট্য নিকেতনের সভাপতি ছিলেন। তিনি একজন নাট্য অভিনেতাও ছিলেন। তেরখাদার চিত্রা মহিলা কলেজ, দিঘলিয়ার মোস্তফা রশিদী সুজা মহিলা কলেজ, রূপসা মহিলা কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ স্থাপন করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।
এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো: নূরুল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, খুলনা মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও কেসিসির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, জেলা আ’লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট জেলা আ’লীগের সভাপতি ডা: মোজাম্মেল হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা