রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় জাবালে নূর বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে কার্যত অচল রয়েছে ঢাকা। এরই ধারবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটে পড়েছেন কর্মমুখী মানুষ। সকালে সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও গাড়ির সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। দুয়েকটি মেট্রো বাস চলতে দেখা গেছে। সেগুলোতেও ঠেলাঠেলি করে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। নারী যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গাড়িতে উঠতে পারছেন না। পাশাপাশি রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি কোনও দূর পাল্লার পরিবহনও। আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, সদরঘাট, গাবতলী, উত্তরা, বাড্ডা ও এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, গুলিস্তান ও মোহাম্মদপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে দুয়েকটি গাড়ি চলতে দেখা যায়। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সকালে সড়কে কোনো স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।
মিরপুর ১ থেকে আলম নামে এক অফিসগামী যাত্রী বলেন, বাসা থেকে সকাল ৭টায় দিকে বের হয়েছেন। বারিধারা যাবেন। কিন্তু সড়কে বাস খুবই কম। দুই একটা যাও চলছে তাতেও লোক ঠাসা।
মোহাম্মদপুরের রিজিয়া পারভীন জানান, তিনি আবদুল্লাহপুর যাবেন। বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির ভিড়ে ঠেলাঠেলি দেখে তিনি উঠতে পারছেন না। এমন আরও অনেকের কর্মস্থল বা গন্তব্যে যেতে বাসের অপেক্ষায় সময় গুনছেন। এতে সবার ভোগান্তি যেন কমছেই না।
এদিকে গাবতলীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার বাইরে ছেড়ে যাচ্ছে না দূরপাল্লার কোনো বাস। এতে ঢাকার বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাবতলীতে যাওয়া সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। তাদের দাবি, যদি গাড়ি বন্ধ করতে হয় তাহলে কেন আগাম ঘোষণা দেওয়া হলো না। সরেজমিনে সকাল ৮টা পর্যন্ত গাবতলীতে থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।
রোজিনা বাস কাউন্টারের ম্যানেজার মিজান বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির নিষেধাজ্ঞার কারণে বাস সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। তবে ভোর ৬টা পর্যন্ত বেশ কিছু বাস গাবতলী থেকে দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
গোপালগঞ্জগামী মাহবুব নামের এক যাত্রী জানান, ''আগাম ষোষণা ছাড়া বাস বন্ধ করায় বিপদে পড়েছি। স্ত্রীকে নিয়ে এখন কতক্ষণ কাউন্টারে বসে থাকতে হতে পারে তা আল্লাহ ভালো জানেন।''
উল্লেখ্য, গত রবিবার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। বুধবার চতুর্থ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাকার পর চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার বিকালে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান