বরিশালে কোরবানির পশুর চামড়ার ভয়াবহ দরপতন হয়েছে। এতে বিশেষ করে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চরম লোকসানের মধ্যে পড়েছে। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ায় পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে বরিশালের আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছে না। এতে করে কাঁচা চামড়া নিয়ে ফেরত গেছেন অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সরকার ঢাকার বাইরে লবণজাত প্রতি বর্গফুট চামড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দর নির্ধারণ করলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মনগড়া দামে চামড়া কেনায় এখন তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এই সুযোগে প্রচুর পরিমাণ চামড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচারের আশংকা করছেন চামড়ার আড়তদাররা। এদিকে চামড়ার অবৈধ পাচার রোধে চামড়াবাহী সকল যান ঢাকামুখী নিশ্চিত করার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
বরিশালে চামড়া ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র নগরীর পদ্মাবতি এলাকা। চামড়ার প্রধান মৌসুম হচ্ছে ঈদুল আজহা। বিগত বছরের ন্যায় এবারও পশু কোরবানির পর পরই সকল চামড়া পদ্মাবতিমুখী হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে হোঁচট খান মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহকারীরা।
ঝামেলার আশংকায় অনেকে লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করলেও আগামী দিনে দাম বাড়ার আশায় অনেকেই নিজ দায়িত্বে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। এদিকে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করায় চামড়ার প্রকৃত দাম পাননি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
তবে স্থানীয়ভাবে কোন সিন্ডিকেট হয়নি দাবি করে আড়তদাররা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বিগত ৩ বছরের বকেয়া টাকা না দেওয়ায় পূুজির অভাবে প্রয়োজনীয় চামড়া কিনতে পারেননি তারা। এ কারণে চামড়ায় স্মরণকালের সব চেয়ে বড় দরপতন হয়েছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরকারী দরের দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছে মতো দামে চামড়া কেনায় তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে মনে করেন চামড়ার আড়তদার জিল্লুর রহমান মাসুম। এই সুযোগে বিপুল পরিমাণ চামড়া ভারতে পাচারের কথা জানিয়েছেন নগরীর পদ্মাবতীর চামড়ার আড়তদার মো. মাহফুজ আলম রায়হান।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিন জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা পূর্বের বকেয়া টাকা পরিশোধ করলে বরিশালের আড়তদারদের হাতে নগদ টাকা থাকতো। তখন আড়তদাররা নগদ টাকায় প্রচুর চামড়া কিনতে পারতো। প্রতিযোগিতা হলে প্রতিটি গরুর চামড়ায় অন্তত ২শ’ টাকা করে বেশি দাম পেত মাঠ পর্যায়ের চামড়া সংগ্রহকারীরা। কাঁচা চামড়া পাচারের আশংকা না থাকলেও ভারতে চামড়ার দাম বেশী হওয়ায় লবণজাত চামড়া পাচার হতে পারে বলে আশংকা করেন শাহিদুর রহমান শাহিন।
যদিও পশুর চামড়ার অবৈধ পাচার ঠেকাতে সড়ক ও নৌপথে কঠোর নজরদারী করার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. নাসির উদ্দিন মল্লিক।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ আগস্ট, ২০১৮/মাহবুব