আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অপজিশন (প্রতিপক্ষ) কিভাবে রিয়েক্ট (প্রতিক্রিয়া) করে এটা তাদের ব্যাপার। আমি তো মনে করি না এখানে ব্যর্থতার কিছু আছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। তাদের ৭ দফার ৩টি বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা বা আপত্তি থাকবে না।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরের দোগাছি এলাকায় ভিজিটরস সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তারা (ঐক্যফ্রন্ট) যদি চান ছোট পরিসরে আবারও আলোচনা হতে পারে। এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর শেখ হাসিনা ছেড়ে দিয়েছেন, তারা যদি চান তাহলে আমাদের জানাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন- আমার দরজা খোলা, তারা যদি আবার আসতে চান।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন- এই বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে দীর্ঘদিনের গ্যাপ, ডিস্টেন্সকে রাতারাতি ওভার নাইট ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব না, ক্লোজ করাও সম্ভব না। কিন্তু বৃহস্পতিবার কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা আছে, ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া যদি শুধু রাজনৈতিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে আমার কাছে তালিকা পাঠাতে বলেছি। এই তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সংলাপে কেউ কেউ ২-৩ বার বক্তব্য রেখেছেন। ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা চাইলে আবারো আলোচনা হতে পারে। কেননা দূরত্বটা বহু দিনের। টানা পোড়ণের ক্ষেত্রে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আছেই। সেনসিটিভ কিছু ইস্যুও আছে। ১৫ আগস্টের প্রতি আমাদের আবিষ্ট আছে। ২১ আগস্ট বিএনপি আমলে নৃশংস ঘটনা ঘটে, বেগম আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ ঝড়ে গেছে। তারপরও আমরা কম্পোমাইজ করেছি। পলিটিক্স শুড বি কম্পোমাইজ এ্যাট যাস্ট।
মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সন্তান কোকো মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু সেখানে মূল ফটক, ভিতরের দরজা বন্ধ রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী অপমানজনকভাবে ফিরে আসলেন। বেগম জিয়া দেখা করলেন না। শুধু দেখা করাই নয়, দরজাই বন্ধ করে দিলেন। সেখান থেকে সম্পর্কের তৃক্ততা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে এবং আমাদের আচ্ছন্নতা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে। ১৫, ২১ আগস্ট এসব তৃক্ত, বিরক্ত বিষয় ঘটে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী অপজিশনদের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। এটি বাংলাদেশে নজিরবিহীন ঘটনা। ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি আমরা দলের লোকজন ভাবতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত ছিল বিএনপির ব্যাপারে, থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাদের সবার আস্থা আছে নেত্রীর ওপর। তিনি যা করবেন জাতীয় স্বার্থে করবেন।
এসময় মন্ত্রীর সাথে সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মূল অংশের ৭১ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। মূল সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৮২টি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দুই প্রান্তের ২টি ট্রান্সিশন পিয়ারের ৩২টি পিয়ারের সবগুলো পাইল শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১২টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে এবং ২১টি পিয়ারের কাজ চলমান আছে। মাওয়া সাইটে মোট ১৭টি ট্রাস এসেছে যার মধ্যে ৫টি স্থায়ীভাবে ও ১টি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৩৫৬টি ভায়াডাক্টের সবগুলো পাইল বসানো হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪৭টি পিয়ারের ১৮টি শেষ হয়েছে এবং ২৯টি চলমান আছে। মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ৬টি শেষ হয়েছে এবং ৩৫টি চলমান আছে।
নদী শাসনের মোট ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে তিন কিলোমিটারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং বাকী আছে ১০ কিলোমিটার। অন্যদিকে সংযোগ সড়কের কাজ সব শেষ হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম