প্রায় ১১শ বর্গ মাইলের জেলা নেত্রকোনা। তারমধ্যে ১০টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা। এক সড়কের শহর নেত্রকোনা সদর। এর ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় বেশিরভাগ উপজেলাগুলোতে। এই সড়কের সাথেই শহরের স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি দফতর। ফলে দিনরাত ব্যস্ততা থাকে শহরের মূল সড়কে। প্রয়োজনের তুলনায় সংকীর্ণ এই সড়কে ইজিবাইকের (অটো) রাজত্ব। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অটোর দাপটে দিশেহারা নগরবাসী।
জানা যায়, অসংখ্য অটোর দখলে নেত্রকোনা শহরের মূল, শাখা ও অলি-গলির সড়ক। প্রতিদিনই সকালথেকে শুরু করে দুপুর, বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ইজিবাইক জ্যাম। এই রুটিন যেনো এখন শহরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী।
শহরের মোক্তারপাড়া, শহীদ মিনার রোড, ছোটবাজার, তেরি বাজার, বড় বাজার, থানার মোড়, আখড়ার মোড় এসকল জায়গাগুলোতে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ইজিবাইকের লাইন লেগে থাকে। ফলে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সকল ধরণের পথচারীদের পোহাতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট। মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটারের সড়কে এক-দেড় কিলোমিটার জুড়ে থাকে এ যানজট। আর এই জ্যামের রেশ পড়ে সারা শহর জুড়ে।
শহরজুড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ইজিবাইক মালিক ও শ্রমিক সংগঠন নিজেরাই অন্ধকারে নিমজ্জিত। অনিয়ম আর দুর্নীতিতে চলে তাদের কার্যক্রম। প্রতিদিন পৌরসভার লাইসেন্সকৃত ১৯৫০ অটো এবং সাড়ে ৬শত রিক্সা ছাড়াও পুলিশের স্লিপ, নেতাদের স্লিপ, শ্রমিক সংগঠনের স্লিপপ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের মতো অটো (ইজিবাইক) চলাচল করে সড়কে। শ্রমিক সংগঠনগুলো আবার প্রতি অটো থেকে মোড়ে মোড়ে ১০ টাকা করে চাঁদা তুলছে। এসকল চাঁদার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন জানেন না কিছুই।
সংগঠনের সভাপতি আব্দুল গফুর কতগুলো অটো চলে তিনি তা জানেন না। তিনি দাবি করেন, ‘মন্ত্রীর কথায় ৫ টাকা করে তোলা হয়। কেউ যদি ১০ টাকা তোলে তাহলে পুলিশে ধরিয়ে দেন। কিন্তু কোনো অটোচালকও বলতে পারে না এই চাঁদায় তাদের কোন লাভ আদৌ হয়েছে কিনা।
সংগঠনটির সাবেক সম্পাদক সোলায়মান বলেন, আগে তো কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়লে দশ হাজার টাকা দেয়া হতো। এখন নাকি ফান্ডে টাকাই থাকে না।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান জানান, লাইসেন্সধারী অটোগুলো শহরে সারাদিন ঘুরঘুর করলেও জ্যাম হওয়ার কথা নয়। বাইরের অটোর কারনেই জ্যাম। এটি তো ট্রাফিক দেখবে। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম জানান, অটোর পারমিশন তো জনপ্রতিনিধিরা দিচ্ছে। এরপর নেতারাও চালাচ্ছে। তারা পারমিশন দেয়ার কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের স্লিপের ব্যাপারে তিনি বলেন, নেতারা এসব চালায়। পুলিশ এর সাথে থাকার কথা না। কেউ পুলিশের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি; এই প্রতিবন্ধকতার দায় ঠেলাঠেলি না করে পৌরসভার ভেতরে শুধু মাত্র লাইসেন্সধারী অটোগুলোকে চলতে দেয়া হোক। অথবা স্থান নির্ধারণ করে অটোতে চিহ্ন লাগিয়ে দেয়া হোক কোনটা কোন মোড় পর্যন্ত যাবে। এমন কিছু না করলে এ শহরে এখন চলাই দায় হয়ে পড়েছে। এদের বেশির ভাগ চালকই অদক্ষ্য। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুঘর্টনা। অনেকেই মারা গেছে অটো চাপায়। পাশাাপশি পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক