নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শাহাদাৎ হোসেন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে হাত পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি খেজুর তলা এলাকায় অবস্থিত দীপ্তি নামক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
৯৯৯ এ ফোন পেয়ে রবিবার ৬ ডিসেম্বর ভোরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। এসময় দীপ্তি মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের পরিচালক মোঃ শফিউল আজম খোকনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর অভিযোগে স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ফতুল্লার বক্তবলী ইউনিয়নের লক্ষীনগর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি একটি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ টানবাজার শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী রওশন আরা একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার। তারা স্বামী স্ত্রী দুই শিশু পুত্র সন্তান নিয়ে শহরের ডনচেম্বার এলাকায় আলোর বাড়ির ৫ম তলায় ভাড়া থাকেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে রাজি নয়। তার অভিযোগ আমি মাদকাসক্ত নই কিন্তু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন কেনো আমাকে সড়ক থেকে মাইক্রোতে উঠিয়ে অপহরণ করে বেধরক মারধর করে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিবে। আমি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিচার চাই।
শাহাদাৎ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, মাইক্রোতে উঠিয়ে কয়েকজন এক সঙ্গে অনেক চর থাপ্পর মারে। এরপর চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় দীপ্তি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে প্রথমে আমার মাথা ন্যাড়া করে। এরপর আমার সম্পদ ও ব্যাংকে কত টাকা আছে জানতে চায়। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় লাঠি দিয়ে হাত পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পিটায়। এক পর্যায়ে আমার হাত ও পা বেধে মারধর করে। রাতভর এভাবে নির্যাতন করেন। পুলিশ গিয়ে আমাকে হাত পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করেন। এবিষয়ে জানতে দীপ্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পূর্নবাসন কেন্দ্রের কাউকে পাওয়া যায়নি।
শাহাদাতের পরিবারের পক্ষ থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়ে কয়েকজন বলেন, এঘটনার আড়ালে তার স্ত্রী রওশন আরার হাত রয়েছে। সে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের সঙ্গে চুক্তি করে শাহাদাতকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
তবে রওশন আরা শাহাদাতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শাহাদাতের সঙ্গে সাড়ে ৩বছর আগে প্রেম করে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাদের পরপর দুটি পুত্র সন্তান হয়। এরপর জানতে পারি শাহাদাৎ আমাকে বিয়ে করার আগে রতনা নামে এক হিন্দু ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেন। তাকে নির্যাতন করায় সে শাহাদাতকে বিচ্ছেদ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। সম্প্রতি তার মা ও বোনদের কথায় আমাকেও নানা ভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। মন চাইলে আমাকে বাজার করে দিত আবার অনেক সময় তার মা বোনদের সঙ্গে গিয়ে থাকত। আমার ও শিশু সন্তানদের খোঁজ খবর নিতেন না। আমার সঙ্গে ভদ্রভাষায় কথা বলতো না। আমি ইচ্ছে করলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারতাম। কিন্তু স্বামীর সংসার করবো বলে সব নির্যাতন সহ্য করেছি।
এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালককে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল