বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, আগামীতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে। নির্বাচন নিরপেক্ষ আদায়ের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর জিলা স্কুল মাঠে বিএনপি’র বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট সরকারের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। সরকার দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ’৭১ সালে দেশের আপামর জনগণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু দেশের কোথাও গণতন্ত্র নেই। সরকার ভোট ডাকাতি করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। জনগণকে দেয়ার মতো এই সরকারের হাতে কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, মেজর জিয়া ভারতের মধ্যে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। তিনি সন্মুখ যুদ্ধ করে খেতাব পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল, এখন আড়াই লাখ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে আওয়ামী লীগের বদৌলতে। এখন একটি কালো কোট গায়ে দিলেই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়।
গত ৩টি নির্বাচনে তিনি নিজেই নিজের ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। সরকারের ১৬ জন সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ার পরও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সমাবেশে স্লোগান দেয়া নিয়ে স্থানীয় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘাতে বিরক্ত হয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্লোগান দিতে হবে রাজপথে। স্লোগান দিয়ে সমাবেশ নষ্ট করবেন না। মিছিল করতে হয় রাজপথে মিছিল করবেন।
দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নেয় দেশের ৬ সিটি করপোরেশনের বিএনপি’র প্রার্থীরা।
ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইসরাক হোসেন বলেন, এই সমাবেশে আসার সময় তাকে পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। বরিশালের নেতাকর্মীদেরও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে। তারপরও শত বাধা উপেক্ষা করে বিভাগীয় সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় দেশের মানুষ বিএনপি’র সাথে আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের আন্দোলন বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছে বলেন ইসরাক হোসেন।
ঢাকা উত্তরে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, এই সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও সুষ্ঠু হবে না। তাই এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
চট্টগ্রামের ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইভিএম দিয়ে ভোট ডাকাতি করে তারা। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সকল সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তারা।
রাজশাহীতে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমরা রাতের ভোট চাই না। সকল নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করায় নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
খুলনায় বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দেশে ভোট ডাকাতির মডেল চালু হয়েছে। ভোট ডাকাতির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রথম শিকার তিনি নিজে।
মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার সঞ্চালনায় মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, আবুল হোসেন খান, আক্তারুজ্জামান শামীম, এএইচএম তসলিম উদ্দিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও বিভাগের ৬ জেলা থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। যদিও পথে পথে তারা তাদের উপর ক্ষমতাসীনদের হামলা এবং পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করেন।
সমাবেশস্থলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জিলা স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশের সাঁজোয়া যান, জলকামান এবং রেকার মোতায়েন করা হয়। এছাড়া পুরো সমাবেশ ঘিরে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি। যার প্রথমটি অনুষ্ঠিত হলো বরিশালে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন