৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:১৮
রামেক হাসপাতাল

শামুকখোল পাখি বাঁচাতে গাছ না কাটতে পরিবেশ অধিদফতরের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শামুকখোল পাখি বাঁচাতে গাছ না কাটতে পরিবেশ অধিদফতরের চিঠি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা গাছে দীর্ঘদিন ধরেই বসতি গড়েছে শামুকখোল পাখি। সেই গাছেই বাচ্চা ফুটিয়েছে। শনিবার ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে কেটে ফেলা হয় দুটি অর্জুন গাছ। আর এতেই গাছ থেকে পড়ে মারা যায় অধিকাংশ শামুকখোল পাখির বাচ্চা। যেগুলো জীবিত ছিল, সেগুলোকে জবাই করেন শ্রমিকরা।

শামুকখোল পাখির প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় নড়েচড়ে বসে বন ও পরিবেশ অধিদফতর। রবিবার তারা বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়কে। পাখি হত্যা বন্ধ করতে আপাতত গাছ না কাটতে বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। 

বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক যেহেতু জেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি। তিনি মামলা না করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি তাকে ও মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পাখিগুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত আর গাছ কাটা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের সামনে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আর তাই সেখানে কাটা হয়েছে দুইটি অর্জুন গাছ। সেই গাছ থেকেই পড়েছে পাখির বাচ্চাগুলো। এ সময় বেশিরভাগ বাচ্চা গাছ থেকে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আর যেগুলো বেঁচে ছিল, সেগুলোকে জবাই করে নিয়ে গেছেন নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয়রা।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হল মোড় থেকে আসা এক রোগীর স্বজন খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সব মিলিয়ে শতাধিক পাখির বাচ্চা মাটিতে পড়ে গেছে। ২০-২৫টি পাখির বাচ্চা নির্মাণ শ্রমিকদের জবাই করতে দেখেছি। দুপুরের দিকে অনেক রোগীর স্বজনরাও কিছু পাখির বাচ্চা নিয়ে গেছেন। পাখিগুলো গাছ থেকে পড়ার পর ছটফট করছিলো। সময়মতো উদ্ধার করা গেলে এগুলোকে বাঁচানো যেত।’

প্রায় ৮ বছর আগে শামুকখোল পাখি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতর এবং আশপাশের গাছগুলোতে বাসা বাঁধে। এখানে শামুকখোল প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি নিরাপদেই ছিল। পরে ২০১৯ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির নির্মাণ কাজ শুরু হলে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।

নতুন আশ্রয় হিসাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গাছগুলোকে খুঁজে নেয়। এখানে এসেও হারাতে হয় বাসস্থান। ২০২০ সালে হাসপাতালের গাছের ডালপালা কাটার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়বারের মত আশ্রয় হারিয়েও রাজশাহী ত্যাগ করেনি শামুকখোলের দল। তারা দ্রুতই হাসপাতালের পূর্ব পাশের রাস্তার ধারের গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়।

সম্প্রতি হাসপাতালের পুরনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সময় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাই পাখিরা এবার আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে। বার বার আশ্রয়হীন হওয়ার পরও পাখিগুলো শহর ছেড়ে যায়নি।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর