আবহাওয়ার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হতেই রাজধানীতে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগী সামলাতে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের বাইরে অস্থায়ী তাঁবু টানানো হয়েছে। এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ২৩ শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত। ডায়রিয়ার আড়ালে শঙ্কা বাড়াচ্ছে কলেরা।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। তবে এবার সময়ের কিছুটা আগেই রোগী আসতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণুর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটি গবেষণা না করে বা নিশ্চিত না হয়ে বলা সম্ভব নয়। এবারের রোগীদের মধ্যে সিভিয়ার ডায়রিয়া এবং কলেরা আক্রান্ত রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, যা মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো কলেরামুক্ত হয়নি। যত দিন পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হবে তত দিন পর্যন্ত আমরা কলেরা ঝুঁকিতে থাকব। কলেরা মোকাবিলায় আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ করে, পয়ঃনিষ্কাশনে কাজ করে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসার সঙ্গে মিটিং করে আমরা ডায়রিয়া-কলেরা নিয়ে সতর্কতার বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে, পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। কলেরা শনাক্তে কিট পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু ঢাকার এই চিত্র যদি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সামলানো মুশকিল হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা ঠিক সময়ে নিলে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা সম্ভব।’
রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, রোগী বাড়ায় হাসপাতালের বাইরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা থেকেও রোগী আসছে। অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি ভাড়া করে রোগী আসছে হাসপাতালে। প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এবার রোগী সামলাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। গত নয় দিনে ১০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে এ হাসপাতালে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা কলেরায় আক্রান্ত হলে তাদের জীবনও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে। আর এ আক্রান্ত হওয়ার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় দূষিত বা অনিরাপদ পানিকে। তবে শুধু পানের জন্য ব্যবহৃত পানিই নয়, বরং খাদ্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে সব কাজেই ব্যবহৃত পানি নিরাপদ হতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো ডায়রিয়ার পাশাপাশি কলেরার বিস্তার ঘটছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশে প্রতি বছর ২৯ মিলিয়ন মানুষ কলেরার কবলে পড়ে, যাদের মধ্যে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এককালে গ্রামে কলেরার প্রকোপ বেশি থাকলেও এসব কারণে এখন শহর এলাকার মানুষের মধ্যেই কলেরার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গরম বাড়ায় পিপাসায় মানুষ বাইরের বিভিন্ন দোকান থেকে শরবত, আখের রস কিনে খাচ্ছে। স্কুল গেটের বাইরে শিশুরা বিভিন্ন খাবার কিনে খাচ্ছে। এসব কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া বাড়ছে। কলেরা আক্রান্তেরও প্রাথমিক উপসর্গ চাল ধোয়া পানির মতো বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া। ভিব্রিও কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বমি বমি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারবার পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ