সাভারে কিশোর গ্যাং সদস্যদের কথামতো না চলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোররাতে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিক মতিউর রহমান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া এলাকার মো. মোস্তফার ছেলে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ভাই-ব্রাদার গ্রুপ’র প্রধান মো. লতিফ ওরফে লেট লতিফ (১৯), শাহীবাগ চৌরাস্তা এলাকার ইয়াসিন খানের ছেলে গ্রুপের সক্রিয় সদস্য আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহান খান (১৬), চাপাইন-সিআরপি এলাকার মো. মাসুদ প্রধানের ছেলে মো. ছাদিক হাসান মুনতাসির (১৫), শাহীবাগ এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৯)। তারা ভাই-ব্রাদার নামীয় কিশোর গ্যাং গ্রুপ গঠন করে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী জিসান প্রামানিক ও সিয়াম রাজাকে মুমূর্ষু অবস্থায় সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাত ৮টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি ও সুইচ গিয়ার দিয়ে কুপিয়ে এবং লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় হামলাকারী।
আহত জিসান প্রামানিক দৈনিক যুগান্তরের সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমান ভান্ডারীর ছেলে এবং সিয়াম রাজা সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার কামরুল হোসেনের ছেলে। এদের মধ্যে জিসান প্রামাণিক বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং সিয়াম রাজা কলমা ওয়াজ আলী মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ‘ভাই-ব্রাদার’ নামক কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান মো. লতিফ ওরফে লেট লতিফ স্কুল শিক্ষার্থী জিসান প্রামানিককে তার অনুসারী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু বখাটে লতিফের কথা না শোনায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনের সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে কৌশলে জিসান প্রামানিককে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় ডেকে এনে কিশোর গ্যাং লিডার লতিফের নেতৃত্বে জিসানসহ দুইজনকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা। এ ঘটনায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম রাজাও গ্যাং প্রধান লেট লতিফের দ্বারা ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়।
আহত জিসানের বাবা সাংবাদিক মতিউর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের সাফারি পার্কে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজনে গিয়েছিল বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেসময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বাসে ওঠা নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িকভাবে মীমাংসা করা হয়।
বিষয়টি জানার পর আমি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যাতে পরবর্তীতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজকে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে কিশোর গ্যাং লিডার লতিফ। আমি এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তাদের স্কুল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবার আলী খান বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনকে দুইদিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে আরও যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যে দলের বা যে নেতারই অনুসারী হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই