প্রকাশনার জগতে লুটপাটকারী চিহ্নিত সিন্ডিকেট প্রকাশকদের সঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার বৈঠকের প্রতিবাদে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্বৈরাচার বিরোধী সৃজনশীল লেখক, প্রকাশক ও এক্টিভিস্ট গণ। পরে তারা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট স্মারকলিপি দেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বৈরাচার বিরোধী সর্বস্তরের সৃজনশীল প্রকাশকদের পক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, বিগত ১৭ বছরের স্বৈরাচারের সহযোগী প্রকাশকরা এখনও বর্তমান সরকারের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করার চেষ্টায় রত। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে আপনার মতো উচ্চশিক্ষিত, বিজ্ঞ একজন অধ্যাপক ও লেখককে উপদেষ্টা হিসেবে পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, আপনি সাধারণ প্রকাশকদের সঙ্গে নিয়ে বসবেন, তাদের মুখ থেকে দীর্ঘ ১৬ বছরের জুলুম বঞ্চনার কথা শুনবেন। দুর্বত্ত-দালাল প্রকাশকরা কীভাবে তাদের দলীয় রাজনীতির বই সরবরাহ করে একচেটিয়া ব্যবসা ও মুনাফা লুটেছে তা জানবেন।
শেখ হাসিনা ও তার আমলারা বস্তাপচা বই প্রকাশ করে কিভাবে সরকারের ভান্ডার লুট করেছে তার বিচার করবেন। কিন্তু আমাদের আশা হতাশায়, আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। আপনার দায়িত্ব নেওয়ার ৪০ দিনও পার হয়নি, শহীদদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই শেখ হাসিনার দালাল, দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত প্রকাশকদের পুনর্বাসন শুরু করে দিয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষের কঠোর আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, যার ফলশ্রুতিতে আপনারা এখন দায়িত্বে। প্রকাশক সমাজ আন্দোলনকারী ছাত্র, শিক্ষক জনতা সহ সর্বস্তরের মানুষের বাইরে ছিলেন না। উপদেষ্টা, আপনি প্রথমেই এমন প্রকাশকদের সাথে মিটিংয়ে বসেছেন, আন্দোলন ব্যর্থ হলে যারা শেখ হাসিনার অনুচর হিসেবে আন্দোলনকারী প্রকাশকদের পুলিশের হাতে তুলে দিত। একজন লেখক হিসেবে আপনার অজানা থাকার কথা নয়, কারা শেখ হাসিনার অনুচর প্রকাশক আর কারা স্বৈরাচার বিরোধী গ্রহণযোগ্য প্রকাশক।
সুতরাং আমরা আপনাকে স্বৈরাচার বিরোধী গ্রহণযোগ্য প্রকাশকদের সঙ্গে অনতিবিলম্বে বসে তাদের কথা শোনার আহ্বান জানাই। নতুন রাষ্ট্র সংস্কার ও বিনির্মাণে আমরা প্রকাশকদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করতে চাই। পাশাপাশি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, ভবিষ্যতে যদি আপনি গণবিরোধী স্বৈরাচারের দালাল দুর্নীতিবাজ প্রকাশকদের সঙ্গে নিয়ে বসেন তবে আমরা বইমেলা বয়কটসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। কেননা, প্রকাশক সমাজ শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের উপস্থিতিতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত ৩টি প্রকাশনীর পক্ষ থেকে ৫ জন প্রকাশক/প্রকাশক প্রতিনিধির সঙ্গে অমর একুশে বইমেলা নিয়ে এক গোপন মিটিংয়ে মিলিত হন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা।
প্রতিবাদ সমাবেশে সৃজনশীল প্রকাশকদের পক্ষ থেকে সাঈদ বারী, মিজানুর রহমান সরদার, দেলোয়ার হাসান, মাহাবুব রাহমান, হেলাল উদ্দিন, আবুল বাশার ফিরোজ, শরীফ শাহজি, মহিউদ্দিন কলি, মামুন সারোয়ার, মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বকর সিদ্দিক, সাইফুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত