‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা’ শীর্ষক সংকলনে জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী কবিদের কবিতা প্রকাশিত হবার প্রতিবাদে বাংলা একাডেমির সামনে ‘জুলাইয়ের কবিতাপাঠ ও প্রতিবাদ সভা পালন করেছে জুলাইয়ের কবি-সাহিত্যিকগণ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, চব্বিশে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে সৈরাচারী শাসক খুনী হাসিনার পলায়নের পর আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসীবাদী শক্তির নির্মূল হবে, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি ফ্যাসিবাদকে যারা দিনের পর দিন শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে, যে সব সাংস্কৃতিক কর্মীরা নিত্য-নতুন বয়ান তৈরির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের মসনদকে দৃঢ় করেছে সেই শক্তি আজও আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অটুট রয়ে গেছে। আমরা জুলাইয়ের কবি সাহিত্যিকগণ অচিরে সেই সাংস্কৃতিক বলয় ভেঙে বাংলা একাডেমিকে জুলাইয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবার আহবান করছি। আমরা আহবান করছি— বাংলা একাডেমির মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতীয় প্রত্যাশার ধারক বাহক হয়ে জাতির পাশে দাঁড়াক।
উপস্থিত ছিলেন কবি শান্তা মারিয়া, কবি এবিএম সোহেল রশিদ, আবৃত্তিকার মাহবুব মুকুল, তাইরান সম্পাদক কবি তাসনিম মাহমুদ, কবি এমদাদুল হক চৌধুরী, কবি তাজ ইসলাম, ছোটদের সময় সম্পাদক শিশু সাহিত্যিক মামুন সারওয়ার, জাসাস নেতা কবি আমিনুল ইসলাম মামুন, ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধি কবি ফাহিম, জুলাই ঐক্যের প্রতিনিধি এবি জুবায়ের, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক কবি ইবরাহিম নিরব, কবি নোমান সাদিক, কবি লোকমান হোসেন জীবন, কবি আরিফ সবুজ, কবি তাহমিনা বিনতে নূর প্রমুখ।
কর্মসূচী শেষে কবি-সাহিত্যিকগণ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করে নয় দফা দাবি পেশ করেন।
দাবীগুলো হলো
১. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা সংকলনে জুলাই-২৪-এ নিষ্ক্রিয় বা জুলাইয়ের চেতনা বিরোধী কবিরা কিভাবে স্থান পেলো, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা সংকলনটি অচিরেই প্রত্যাহার করে নতুনভাবে সুসম্পাদিত আকারে প্রকাশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলা একাডেমি কোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। আর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা নিছক কোনো কবিতার সংকলন নয়, এটি জুলাই বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক দলিল। তাই এখানে জুলাইয়ের সক্রিয় সকল কবিদের দল-মত ও আদর্শের উর্ধ্বে উঠে স্থান দিতে হবে।
৩. বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকতে হবে, এখানে কোনো বিশেষ দল-মতকে প্রাধান্য দেয়া বা অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই, বাংলা একাডেমির সকল প্রোগ্রাম, যেমনÑ প্রকাশনা, গবেষনা, পুরষ্কার-সম্মাননা, প্রশিক্ষণসহ সকল ক্ষেত্রে একচোখা নীতির পরিবর্তন করতে হবে। জুলাই বিল্পব ও বাংলাদেশপন্থী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলা একাডেমি থেকে সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।
৪. বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিচিত করার উদ্যোগ নিতে হবে, ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কালচারাল সেন্টার স্থাপন করে সেখানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কবিসাহিত্যিক যেমন—জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দিন, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, আহসান হাবীব, আবু ইসহাক, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী সকল লেখকদের বই রাখতে হবে— যাতে বিদেশীরা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিতে পারেন।
৫. বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকের বই বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী হাই কমিশন ও প্রথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনে পৌঁছাতে হবে।
৬. বাংলা একাডেমিকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হবে, ফ্যাসিবাদের দোসর সকল কবি সাহিত্যিককে প্রোমোট করা বন্ধ করে বাংলা একাডেমিকে পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশপন্থি হতে হবে।
৭. বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিশনের নামে আমলাতান্ত্রিক কমিশন বাতিল করতে হবে এবং কমিশনে জুলাই বিপ্লবের স্টেক হোল্ডার কবি-সাহিত্যিকদের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৮. তরুণ লেখক প্রকল্পসহ সকল প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বৈষম্য দূর করতে হবে, এসব প্রোগ্রামের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি কিছুদিন আগে তরুণ লেখক প্রকল্পের জন্য তরুণ কবি সাহিত্যিকদের চূড়ান্ত বাছাই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে— এ তালিকা কিভাবে কোন মানদ-ে তৈরি করা হয়েছে তার জবাব দিতে হবে। যারা বাদ পড়েছেন তারা কোন মানদন্ডে বাদ পড়েছেন তা জানার অধিকার রাখেন, বাংলা একাডেমিকে তা জানাতে হবে।
৯. বাংলা একাডেমি যাতে আমলাতন্ত্রের চাবিকাঠি না হতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল