রাজধানী ঢাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য নতুন কোনো খেলার মাঠ কিংবা পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেই বরং আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে নগরীতে খোলা জায়গা কমিয়ে ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনাবিদদের অভিযোগ, এ কারণে রাজধানীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) আবারও সংশোধনের পথে হাঁটছে সরকার।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ভবনের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন পরিকল্পনাবিদেরা। ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ: বিআইপির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
বিআইপির সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত একটি খেলার মাঠ কিংবা পার্কও নির্মিত হয়নি। অথচ আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে ভবনের উচ্চতা বাড়াতে আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ১০ ফুট সড়কের পাশে যদি ১০ তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়, অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করবে কীভাবে? এই পথ সরকারের বিপজ্জনক।
বিআইপি সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয়বারের মতো ড্যাপ সংশোধনের প্রস্তাব শিগগির উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে। অনুমোদন মিললে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। পরিকল্পনাবিদেরা মনে করছেন, এতে রাজধানীতে বহুতল ভবনের চাপ আরও বাড়বে এবং নাগরিক সুবিধা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
বিআইপির সহসভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, আগামী ১০ বা ২০ বছর পর ঢাকায় কত মানুষ থাকবে, তা সরকারকে আগে নির্ধারণ করতে হবে। এরপর নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে কেবল ভবনের উচ্চতা বাড়ানো হলে শহর অচল হয়ে পড়বে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, খেলার মাঠ ও পার্ক না থাকায় শিশু-কিশোরেরা ঘরে বন্দী থেকে মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গুরুতর ক্ষতি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—সরু রাস্তার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ অনুমোদন বন্ধ করা। ছয়তলার ওপরে ভবনকে বহুতল হিসেবে গণ্য করে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এলাকাভিত্তিক স্কুল, হাসপাতাল, পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম, বোর্ড সদস্য আবু নাঈম সোহাগ ও ফাহিম আবেদিন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল