২ জুলাই, ২০১৭ ১২:৪১

মৌচাক ফ্লাইওভার খুলছে এ মাসেই

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মৌচাক ফ্লাইওভার খুলছে এ মাসেই

অবশেষে চলতি মাসে সম্পূর্ণভাবে চালু হচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইভার। তিন অংশে বিভক্ত এ ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও-সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং  ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস (মৌচাক ক্রসিং) পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশের কাজ এ মাসেই শেষ হবে। ফলে বহু আকাঙ্ক্ষিত এ ফ্লাইওভার চলতি মাসেই সম্পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই ফ্লাইওভারের সার্বিক কাজ শেষ করে এটি খুলে দেওয়া হবে। জুনে আমাদের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যায় কাজ একটু পিছিয়েছে। এখন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে, তা এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সরেজমিন রাজধানীর রামপুরা, শান্তিনগর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদের ছুটি কাটিয়ে কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। রাস্তা কার্পেটিংসহ চলছে ঢালাইয়ের কাজ। মৌচাক থেকে মালিবাগ অংশে বিম সমন্বয় এবং ঝালাইয়ের কাজ করছিলেন আয়ুব আলী। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝখানে বর্ষা-বৃষ্টি এবং ঈদের ছুটির কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এখন আবার পুরোদমে কাজ চলছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই মনে হচ্ছে সব কাজ শেষ হবে।   এই ফ্লাইওভারটির বিস্তৃতি সাতরাস্তা-মগবাজার-মৌচাক-রাজারবাগ পুলিশ লাইন-শান্তিনগর ও মালিবাগ এলাকা জুড়ে। ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভার চালু হলে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার রেলক্রসিং এলাকায় নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এই ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি এবং ইস্কাটন থেকে মৌচাক অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। এর সুফল ভোগ করছেন ব্যবহারকারীরা। বাকি অংশের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা শেষ না হওয়ায় এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু জুনের মধ্যেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এভাবে বার বার সময় পেছানোয় বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা আরবান

ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট ১৯৯৯ সালে যান চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ২০টি স্থানে ফ্লাইওভার, ইন্টারসেকশন, আন্ডারপাস, বাসস্ট্যান্ড, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে ২০০০ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বিনিয়োগে ফ্লাইওভার নির্মাণের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হয়।  সে সময় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য কুয়েত সরকার দুই লাখ কুয়েতি দিনার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে হঠাৎ কুয়েত ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ফলে ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পটি ভাটা পড়ে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। ওই বছরই এর নির্মাণ কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে তা সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।   কিন্তু সে বছরও কাজ শুরু করতে পারেনি সরকার। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় সময়সীমা বাড়িয়ে এ বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। এই বর্ধিত সময় অতিক্রম করলেও শেষ হয়নি কাজ। ফলে জুলাইয়ের মধ্যে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু করার জন্য পুরোদমে কাজ চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর