৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০৯:২৪

বাজার করি সুপারশপে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাজার করি সুপারশপে

স্বস্তিতে দেখেশুনে, ঘুরেফিরে কেনাকাটার পরিবেশ সুপারশপমুখী করছে মানুষকে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মেহেদী মার্টির ছবি —জয়ীতা রায়

পিয়াজ, কাঁচামরিচ, লেটুসপাতা, চালতা থেকে শুরু করে ঝাড়ু অথবা শিশুর খেলনা— কি পাওয়া যায় না সুপারশপে। বাজার করার প্রচলিত ধারণাই পাল্টে দিয়েছে সুপারশপ।

সব ধরনের পণ্য এক ছাদের নিচে নির্ধারিত দামে পেয়ে যাওয়ার কারণে নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে সুপারশপ। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহূত পণ্যসামগ্রীর সবকিছুই মিলছে সুপারশপে। কাঁচাবাজারের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে ক্রেতাদের মুক্তি দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
এজন্য সুপারশপের প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনি অতিরিক্ত মূল্য, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রীর কারণে বিভিন্ন সুপারশপের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে প্রচুর। সব মিলিয়ে নাগরিক জীবনে সুপারশপ এখন আনন্দ-বেদনার অনুষঙ্গ। এখন কেনাকাটা সহজ হয়েছে। এমনকি ঘরে বসেই অর্ডার দিয়ে বাজার করতে পারছে মানুষ। কিন্তু তার জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। আর ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার কারণে পণ্য কেনার লাগাম থাকছে না।

মানুষের ব্যয় বাড়ছে সঙ্গে বাড়ছে হতাশাও।         
বাংলাদেশে প্রথম ২০০১ সালে রহিমআফরোজ সুপার স্টোরস লি. ‘আগোরা’ নামে রিটেইল চেইনশপ চালু করে। এরপর আসে ‘মীনাবাজার’। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। এসিআই গ্রুপ ‘স্বপ্ন’ সুপারশপের মাধ্যমে বড় বিনিয়োগ নিয়ে রিটেইল ব্যবসায় আসে। বর্তমানে রাজধানীতে স্বপ্ন, আগোরা ছাড়াও প্রিন্স বাজার, ক্যারি ফ্যামিলি, শপ অ্যান্ড সেফ, আলমাস, ফ্যামিলি কেয়ার, ল্যাভেন্ডার, পিক অ্যান্ড পে, ফ্যামিলি নিডস, চেকার্স ডিজিটাল, আমানা সুপারশপ, ওশেনিয়া, আরবি, জি-মার্ট, সপ্তর্ষী, ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড, ফ্যামিলি টাচ, মেহেদী মার্টসহ প্রায় ২০০টি সুপারশপ রয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায়ও অনেক প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।

মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা গোলাম হোসেন বলেন, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে সকালের দিকে কাঁচাবাজার করতে পারতাম না। এখন সুপারশপ হওয়ায় যে কোনো সময়ে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি সবই কিনতে পারি। আমার মতো মানুষের জন্য সুপারশপ বাজার করার সবচেয়ে উত্তম জায়গা।

তবে বেশকিছু সুপারশপে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন ক্রেতারা। পণ্যের গায়ে তারিখ খেয়াল না করলেই প্রতারিত হচ্ছেন তারা। হাতেগোনা কিছু সুপারশপের অসততায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। গত বুধবার মিরপুর, বনানীসহ বেশকিছু এলাকার কয়েকটি সুপারশপে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রতি সপ্তাহেই ধরা পড়ছে এ ধরনের প্রতারণা। তাজা বলে ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে বাসি মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্যের দাম নিয়েও রয়েছে লুকোচুরি। মূল দামের চেয়ে প্রায় প্রতিটি পণ্যেই রাখা হচ্ছে বেশি দাম। সরেজমিন বিভিন্ন সুপারশপে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এক ছাদের নিচে সব পণ্য পাওয়া যায় তাই উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও সুপারশপে বাজার করতে আসছেন। কিন্তু ভোক্তাদের অভিযোগ, সুপারশপে পণ্যের দাম বেশি নেওয়া হয়, টাটকা, কীটনাশকমুক্ত শাক-সবজির কথা বলে অনেক সুপারশপেই সাধারণ মানের শাক-সবজি বিক্রি করা হয়। তারচেয়ে মহল্লায় ভ্যানে করে যে শাক-সবজি বিক্রি করা হয় সেগুলো অনেক সতেজ ও পরিচ্ছন্ন।

কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা লতিফা খানম বলেন, ভিড় ঠেলে বাজারে গিয়ে মাছ-মাংস কেনা আমাদের জন্য খুবই মুশকিল ছিল। সুপারশপের কারণে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলেছে। কিন্তু পাউরুটি বা তরল দুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও বিক্রির জন্য রেখে দেওয়া হয়। তারিখ খেয়াল না করেই এসব পণ্য কিনে নেন ক্রেতারা। আর কার্ডে কেনাকাটা করায় খরচ বেশি হয়। অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস অনেক সময় কেনা হয়ে যায়। নগদ টাকা দিতে হয় না বলে হিসাবও থাকে না।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বর্তমানে এ ব্যবসায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন কারণে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি এ খাতের। সুষমভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার এখনো এ খাতের জন্য কোনো নীতিমালা করেনি। বর্তমানে ২৫ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুপারশপের সঙ্গে জড়িত বলে তারা জানান। ব্যবসার বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ছে কিন্তু সরকারের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সুষ্ঠু নীতিমালা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনা করা গেলে দেশে বিদ্যমান সুপারশপগুলো সব শ্রেণির ক্রেতার স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্র হতে পারে। আরও বিকাশ ঘটতে পারে এই ব্যবসা উদ্যোগের। ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রায় ২০০ সুপারশপ মোটেই সন্তোষজনক নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর