গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিলে বিচার বিভাগ সরকারের কাছে নতজানু হতে বাধ্য হবে এবং অন্যান্য সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. কামাল বলেন, বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী যেভাবে করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই ঠিক নয়। এ ব্যাপারে সবার মতামত নিতে হবে। এ জন্য জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে 'সংবিধান সংশোধন, বিচারপতিদের অভিশংসন ও এর তাৎপর্য' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ওই গোলটেবিলের আয়োজন করে। গণফোরাম সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, জুলাই মাসে হঠাৎ করে সব কাজ বাদ দিয়ে সরকার সংবিধান সংশোধনের কাজ শুরু করল কেন? অথচ সুপ্রিমকোর্টে বিচারক নিয়োগের আইন এখনো হয়নি। বিচার বিভাগের এসব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে সংবিধান সংশোধন কেন জরুরি হলো।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি আমিরুল কবীর চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন-এর নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. মিজানুর রহমান শেলী, ড. শওকত আরা হোসেন, ড. বোরহান উদ্দীন খান, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ূন কবীর হিরু প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে বহুদিন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্ব চলে আসছে। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ হবে। তিনি বলেন, সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না, তা আজ জোর দিয়ে বলা যায় না। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই কার্যকর হবে। সুতরাং সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলেই অনেকের আশঙ্কা। এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর হঠাৎ করে সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা প্রদান সন্দেহের উদ্রেক না করে পারে না। এ সংশোধনী আনার আগে বিভিন্ন আইনি দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে শুধু বিচারকরাই সংসদ দ্বারা অভিশংসনের মুখে পড়বেন না, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও সংসদ কর্তৃক অভিশংসনের মুখে পড়বেন। যার ফলে এ সংস্থাগুলোর কার্যকারিতাও হুমকির মুখে পড়বে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর প্রভাব ভয়াবহ হতে বাধ্য। কারণ বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়া হলে এক সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা অন্য সরকারের আমলে অপসারণের শিকার হবেন।-নিজস্ব প্রতিবেদক