সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ওয়্যারহাউসে আটকে আছে সিলেটের রপ্তানি সম্ভাবনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ওয়্যারহাউসে আটকে আছে সিলেটের রপ্তানি সম্ভাবনা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের। যুক্তরাজ্যের বাজারে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুটিরশিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু সিলেটে ওয়্যারহাউস না থাকায় সেই সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যদিও সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ওয়্যারহাউস স্থাপনে সরকারের বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বাজারে সিলেটের পণ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারি উদ্যোগে ওয়্যারহাউস নির্মাণের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চেম্বার সভাপতি এ টি এম শোয়েব। জানা গেছে, ২০১১ সালে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। নানা জটিলতায় কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইট। দীর্ঘ বিরতি শেষে গত বছর ৪ অক্টোবর ফের চালু হয় বিমানের সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট। সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ওসমানীতে কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপিত হওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। কিন্তু ওয়্যারহাউস জটিলতায় সিলেট থেকে তারা পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে সিংহভাগই সিলেটের বাসিন্দা। সেখানকার বাংলাদেশিদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়রাই সিলেটি। বড় আকারের সুপার শপ, রেস্টুরেন্ট, টেকওয়ে প্রভৃতির মালিকানায়ও সিলেটিদের নেতৃত্ব রয়েছে। ফলে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানি করা গেলে সেখানে বাজার ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা লন্ডনে ফ্রোজেন ফিশ, শাক-সবজি, ফলমূল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা, পান, বিন্নি চাল, গার্মেন্টসামগ্রী রপ্তানির পরিকল্পনা করছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পণ্য রপ্তানির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঢাকার শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস রয়েছে। সেখান থেকে প্যাকেজিং ও কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সিলেটের রপ্তানিকারকদের। এ ছাড়া পচনশীল পণ্যগুলো ঢাকায় নিয়ে যেতে যেতে পচন ধরে। রপ্তানি বাড়াতে ও বিড়ম্বনা রোধ করতে শ্যামপুরের মতো সিলেটেও ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের কাছে চিঠি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। চিঠিতে বলা হয়েছে, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সুবর্ণ সুযোগ। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পণ্য রপ্তানির জন্য সিলেটে ওয়্যারহাউস নির্মাণ জরুরি। এটি নির্মিত হলে শাক-সবজি, ফলমূলসহ কৃষিপণ্য বেশি পরিমাণে রপ্তানি সম্ভব হবে।

সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্যে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি শাড়ি, সাতকরা, জারা লেবু, পান, বিন্নি চাল, বেতের আসবাবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যদি সিলেট থেকে সরাসরি রপ্তানি শুরু হয়, তবে এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নতুন প্রাণ পাবে, লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের শোয়েব বলেন, সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পর সিলেট চেম্বার রপ্তানিকারক, উৎপাদক ও ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছে, যোগাযোগ রাখছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্বয় করা গেলে এবং ওয়্যারহাউস নির্মিত হলে রপ্তানি জোরদার ও সহজ হবে। ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা এত দিন লকডাউনের অজুহাত দেখিয়েছেন। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবারও সেসব দফতরে চেম্বারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে।

জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। নানা জটিলতার কারণে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। সিলেটে ওয়্যারহাউস হলে, রপ্তানি শুরু হলে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। দেশি পণ্য বেশি পরিমাণে রপ্তানি করা গেলে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং কৃষকরা উপকৃত হবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর