বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

‘পোস্ট কভিড’ নিয়ে উদাসীনতা

সিলেটে বেড়েছে হঠাৎ মৃত্যু

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইনডোরে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমদ। এক গেম খেলে কোর্টের পাশে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থবোধ করে জ্ঞান হারান। সঙ্গে সঙ্গে সহখেলোয়াড়রা তাকে নিয়ে যান পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তিনি আর বেঁচে নেই। ঘটনাটি ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার।

মওদুদ আহমদের মতো এ ইনডোরে খেলতে আসা আরও দুই অ্যামেচার খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়েছে আকস্মিক। সিলেটে ইউনিসেফে কর্মরত ডা. সেলিম আহমদ খেলতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারের রামুতে। খেলারত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। আমিরুল ইসলাম নামে আরেক অ্যামেচার খেলোয়াড় পেশায় বীমা কর্মকর্তা। সকালে নাশতা খাওয়ার সময় চেয়ার থেকে ঢলে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। গত দুই মাসের মধ্যে আকস্মিক মারা গেছেন এ তিন অ্যামেচার ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। এ তিনজনই নন, সিলেটে প্রতিদিনই খবর মিলছে ‘হঠাৎ মৃত্যু’র। প্রায় ছয় মাস ধরে এমন মৃত্যু বেড়েই চলেছে। শহরের মতো গ্রামাঞ্চলেও বেড়েছে এমন মৃত্যু। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান জকিগঞ্জ উপজেলার গণিপুর গ্রামের আলতা আহমদ। আর একই দিন ফজরের নামাজের পর হঠাৎ মারা যান একই গ্রামের এবাদ আহমদও। চিকিৎসকরা বলছেন, ‘হঠাৎ মৃত্যু’র এমন ঘটনার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে বড় একটি কারণ হতে পারে ‘পোস্ট কভিড’ জটিলতা। অনেকে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর ‘ফলোআপ ট্রিটমেন্টের’ ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। এর মধ্যে করোনা যাদের ফুসফুস ও হার্টকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের ক্ষেত্রে ‘হঠাৎ মৃত্যু’র আশঙ্কা বেশি। সিলেটে গত জুনের মধ্যভাগ থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়। ওই সময় হাসপাতালে শয্যা সংকটে অনেকেই বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেকে নমুনা পরীক্ষাও করাননি। কেউ কেউ চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করেন। পরীক্ষা না করায় করোনা আক্রান্তের বিষয়টি অনেকের অজানা থেকে যায়। আবার যারা নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন তারাও পরবর্তীতে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর আর ‘ফলোআপ ট্রিটমেন্টের’ জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি। ফলে পোস্ট কভিড জটিলতাকে সঙ্গী করেই দিন পার করছিলেন অনেকে। এতে নীরবে দিন দিন আক্রান্তদের হার্ট ও ফুসফুস আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে জানান চিকিৎসকরা। ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রসঙ্গে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শিশির চক্রবর্তী বলেন, ‘কভিড আক্রান্ত অনেকের ফুসফুস ও হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বেশির ভাগই কভিড নেগেটিভ হওয়ার পর আর স্বাস্থ্যসচেতন থাকেন না। অথচ এক বছর পর্যন্ত পোস্ট কভিড জটিলতা থাকতে পারে। কিন্তু পোস্ট কভিড জটিলতা থাকলেও অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। এসব ক্ষেত্রে যাদের ফুসফুস, হার্ট ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ থাকে তাদের আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘পোস্ট কভিডের কারণে হঠাৎ মৃত্যু বেড়েছে কি না নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে কারও জটিল রোগ থাকলে কভিড-১৯-উত্তর সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। তা না হলে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।’

সর্বশেষ খবর