মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মহামারীতে সংকটে নারী উদ্যোক্তারা

সিলেটে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঋণ নিয়ে সংকটে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না সিলেটের নারী উদ্যোক্তারা। দীর্ঘ মহামারী মহাসংকটে ফেলেছে তাদের। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গেল ২০ মাসের বেশির ভাগ সময়ই নারী উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। লকডাউন শিথিলকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরিসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল বন্ধ। তাই এ সময়ের মধ্যে অনেক উদ্যোক্তাই পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। করোনা সংকটে পড়ে সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের অন্তত ২০ ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়াতে না পেরে আরও ৩০-৪০ ভাগ উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পথে। এ অবস্থায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। গেল এক দশকে সিলেটে নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। একসময় বিউটি পার্লার ও টেইলারিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ব্যবসা উদ্যোগ। এখন কৃষি থেকে কন্সট্রাকশন সব ক্ষেত্রেই সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন তারা। সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হিসাব মতে, সিলেট নগরীতে ১ হাজারের ওপরে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর মধ্যে উইমেন্স চেম্বারের সদস্য ১৮০ জন। সিলেট নগরীতে নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত বিউটি পার্লারই রয়েছে ৩ শতাধিক। এর বাইরে রয়েছে টেইলারিং, বুটিকস হাউস, কাপড়ের দোকান, কারুশিল্প, ফ্যাশন হাউস, ক্যাটারিং, কন্সট্রাকশন, ফার্মেসি, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট সাপ্লাই, অ্যাগ্রো ফার্ম ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা। এ ছাড়া অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে নানারকম ব্যবসা করছেন।

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ের বেশির ভাগই জরুরি পরিষেবার আওতায় না পড়ায় করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সরকারি নির্দেশনায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। গেল ২০ মাসের মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই আউটলেটের দরজা খুলতে পারেননি তারা। ফলে দোকানভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে না পেরে নারী উদ্যোক্তাদের ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর গত কয়েক মাস ধরে অনেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্যবসায় মন্দাভাব চলায় অনেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। চালু থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৩০-৪০ ভাগ প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানিয়েছেন সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি স্বর্ণলতা রায়।

নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার এ ধাক্কা যেখানে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সামলে উঠতে পারছেন না, সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের ঠিকে থাকা কঠিন। যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বড় বিপাকে।

ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় চাপ বাড়ছে ব্যাংকের। ব্যাংকের কাছে খেলাপি হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ঋণ নিতেও পারছেন না।

এ অবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সবচেয়ে বেশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি স্বর্ণলতা রায়। তিনি জানান, সরকারি প্রণোদনা, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, সরকারের পক্ষ থেকে বিনা সুদে ঋণ, আগামী দুই বছর ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফ করা গেলে নারী উদ্যোক্তারা হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। অন্যথায় যেসব নারী উদ্যোক্ত এখনো ঠিকে থাকার লড়াই করছেন তারাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর