সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেট সীমান্তে বাড়ছে অনুপ্রবেশ

কেউ আসছেন কাজের খোঁজে, কেউ জড়িত চোরাচালানে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সীমান্তে হঠাৎ বেড়েছে অনুপ্রবেশ। গত তিন সপ্তাহে অন্তত ১১ জন বিদেশি নাগরিক ধরা পড়েছেন সিলেটে। এদের মধ্যে রয়েছেন নেপাল, ভারত ও নাইজেরিয়ার নাগরিক। তাদের কেউ কেউ কাজের সন্ধানে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। আবার কেউ জড়িত চোরাচালানে। দালালদের মাধ্যমেই তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। পুলিশ দেশীয় এই দালাল চক্রের খোঁজ করছে। এদের গ্রেফতার করা গেলে অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সর্বশেষ শুক্রবার রাতে সিলেট নগরীর ভার্থখলা এলাকা থেকে সীতারাম লাল চন্দ্র (৫০) নামের ভারতের এক নাগরিককে আটক করে পুলিশ। সীতারাম ভারতের ছত্তিশগড় প্রদেশের বিলাসপুর জেলার মারোয়াড়ি থানার মাটিয়াঢাল এলাকার শ্যামলাল চন্দ্র দাসের ছেলে। অনুপ্রবেশের দায়ে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সীতারাম সিলেট নগরীর ভার্থখলা ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় কয়েক দিন ধরে রহস্যজনকভাবে ভিক্ষা করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সীতারাম পুলিশকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ৫৩ দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরপর সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের জাফলং এলাকা দিয়ে মাসদিন পূর্বে সাঁতরে নদী পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। অনুপ্রবেশের পর তিনি চলে আসেন সিলেট নগরীতে। সীতারাম বাংলা ও হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। তার অনুপ্রবেশ ও ভিক্ষাবৃত্তিকে রহস্যজনক বলে মনে করছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কোনো অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত।

এর আগে ১৬ নভেম্বর জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর আসামপাড়া এলাকা থেকে পাঁচ নারীসহ ভারতের সাত নাগরিককে আটক করে বিজিবি। বিজিবি শ্রীপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. ইব্রাহিম জানান, আটকের পর নিজেদের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা বলে দাবি করেন তারা। পরে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া যায় তারা ভারতীয় নাগরিক। এরপর তাদের ভারতে পুশব্যাক করা হয়। একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানান, ভারতের ওই সাত নাগরিক কাজের সন্ধানে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। শ্রীমঙ্গলের একটি খামারে তাদের কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দালাল চক্র বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল। এদিকে ১১ নভেম্বর গভীর রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের হরিপুর বাজারে রহস্যজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় আলীম উদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তিনি ভারতের আসাম প্রদেশের নগাঁও জেলার মুরাজার মহকুমার হুজাই থানার বরাআউট গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে আলীম উদ্দিন পুলিশকে জানান, তিনি ভারতের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নলজুড়ী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেন।

পুলিশের ধারণা, আলীম উদ্দিন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই তিনি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। ৫ নভেম্বর রাতে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে দুই নেপালি নাগরিককে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন- নেপালের ভোজপুর জেলার আমচক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জয় বাহাদুর কামি (৪৮) ও তার ছেলে শান বাহাদুর (১০)। জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা পুলিশকে জানান, কাজের সন্ধানে ভারতীয় দালালের সহায়তায় তারা সুনামগঞ্জের বড়ছড়া সীমান্ত দিয়ে ৩ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এর আগে সিলেট থেকে দুই নাইজেরিয়ানকে আটক করে পুলিশ। তারাও ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান, মাঝেমধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিদেশি নাগরিকরা ধরা পড়েন। কোথাও অনুপ্রবেশের খবর পেলেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অনুপ্রবেশের সঙ্গে কোনো দালাল চক্র জড়িত কি না এ ব্যাপারে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে। কোনো চক্রকে শনাক্ত করা গেলে তাদের আইনের আওতায় এনে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর