শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হাওরের জলাভূমি ভরাটই বন্যার অন্যতম কারণ

গবেষণায় তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের হাওর অঞ্চলে জলাভূমি ভরাটই বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩২ বছরে দেশের হাওর এলাকায় জলাধারের জায়গা ৯০ ভাগ কমেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা’ শীর্ষক আলোচনায় এ গবেষণা ফল প্রকাশ করা হয়। বুয়েটের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রিফাত ও মারিয়া মেহরিন গবেষণাকর্মটি ২০২১ সালের মার্চ মাসের শুরু করে ২০২২ সালের জুনে শেষ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে জলাধার ছিল ৩ হাজার ২৬ বর্গ কিলোমিটার। যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার।

অপরদিকে, জলাধারে গড়ে উঠেছে অবকাঠামো। ১৯৮৮ সালে হাওর অবকাঠামো আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৯৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ বর্গ কিলোমিটারে।

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাওরে জলাধার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সালে ভূমির ব্যবহারে বেশি পরিবর্তনের কারণ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টারপ্ল্যান।’

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জলাভূমির পরিবর্তন জীব-বৈচিত্র্যে তাৎপর্যমূলক প্রভাব ফেলছে যা উপেক্ষা করা অনুচিৎ। আগের বছরগুলো থেকে বর্তমানে বন্যার ভয়াবহতা আরও বেশি হওয়ার কারণ অতিরিক্ত অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ। ১৯৮৮ সাল থেকে হাওরের ভূমি প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে এবং ৪ ভাগ জমিতে অবকাঠামো তৈরি হয়। যার ফলে হাওরের পানিধারণ ক্ষমতা  কমে যায় এবং বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, ‘হাওর রক্ষা, পুনরূদ্ধার, উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভূমি পরিদর্শন, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এবং মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাওর কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। দেশের হাওর এলাকার ভূমি রক্ষা করা ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব। সরকারের উচিৎ বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রের সঠিক উদ্যোগ নেওয়া, কারণ দুর্বৃত্তকে নিভৃত করা।’

আইপিডির পরিচালক আরিফুল ইসলাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পেতে ভূমি বৈচিত্র্য অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান।

পরিকল্পনাবিদ চৌধুরী মো. জাবের সাদেক বলেন, ‘ভয়াবহ পরিমাণ জলাধার কমেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো, যতটুকু হাওর এলাকা আছে, ততটুকু আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের এ জন্য ডিজিটাল মনিটরিং করতে হবে।’

তিনি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে পরিবেশগত প্রভাব ও পরিকল্পনাগত প্রভাব কঠোরভাবে নির্ণয় ও প্রয়োগের আহ্বান জানান।

গবেষক ইনজামাম জানান, তিনি গবেষণাটি করতে স্যাটেলাইটের ছবি ও গুগল আর্থের সহযোগিতা নিয়েছেন। তার গবেষণা সুপারভাইজার ছিলেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. শাকিল আকতার।

সর্বশেষ খবর