ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় ডলারের যে দাম উল্লেখ করা হয়, সে দামেই বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ জানাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের সুপারিশ করা হলে ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য এলসি খুলবে না। সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে নিজস্ব কারখানায় পরিশোধন করে অভ্যন্তরীণ বাজারে কম দামে সরবরাহ করছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছেন, শুধু চিনি নয়, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরাও ডলারের উচ্চ রেটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও ডলারের দাম বেশি থাকায় তার সুফল মিলছে না। ফলে এখানে চিনির জন্য পৃথক কোনো নীতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের বাজার দর কী হতে পারে, তা পর্যালোচনা করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন ওই রিপোর্টটি খতিয়ে দেখছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের গতকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাদা খোলা চিনির যৌক্তিক মূল্য ছিল ৭৪ টাকা। অথচ বাজারে এখন আমদানিকৃত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা দরে। প্যাকেটজাত চিনির দাম পড়ছে আরও বেশি। গত এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, দেশের চিনি পরিশোধনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিলম্বে মূল্য পরিশোধের সুবিধা নিয়ে ঋণপত্র খুলে থাকে। তবে ঋণপত্র খোলার পর মূল্য পরিশোধের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা (তখনকার বাজারদর অনুসারে) পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর ফলে বিপুল লোকসানের মুখে পড়ছেন পরিশোধনকারীরা।
অ্যাসোসিয়েশনের দাবি- ঋণপত্র খোলার সময় প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা থাকলেও বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০৩ টাকা পর্যন্ত রেট রাখা হচ্ছে (২৫ জুলাইর হিসাব অনুযায়ী)। এর ফলে দেশে চিনির দাম বৃদ্ধি না করে বিক্রি করায় লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার সময় যে রেট থাকবে বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের সময় সেই রেট বহাল রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহের জন্য সুপারিশ করেছে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চিনি পরিশোধনকারীরা যে সুপারিশ জানিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। তিনি বলেন, এলসি মূল্য পরিশোধের সময় ডলারের রেট কী হবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে না সরকার। এটি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, এলসি খোলার সময় ডলারের দাম যা ছিল বর্তমানে তার চেয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দরে এলসি নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। এত টাকা ব্যাংকগুলো ছেড়ে দেবে না। সরকার থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তখন ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাইবে না।
 
                         
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    