শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ভাইরাল ফ্লুতে কাবু শিশুরা

মিলছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব, আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে, বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। কিন্তু চট্টগ্রামে নতুন করে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্তের পর মিলছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। দিশাহারা হয়ে উঠেছেন মা-বাবা। ডেঙ্গুর ভয়াবহতার সময়ে শিশুর জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।  জানা যায়, শিশুর শরীরে প্রথমে হঠাৎ জ্বর দেখা দেয়, এরপর তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। দুই-একদিনের মধ্যে যুক্ত হয় সর্দি, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। অনেক শিশুই নিতে পারে না স্বাভাবিকভাবে শ্বাস। চিকিৎসকরা এটিকে বলছেন ভাইরাল ফ্লু। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্তদের কারও শরীরে মিলছে উচ্চ জ্বর, ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়া। ঋতু পরিবর্তনের কারণেই ভাইরাল ফ্লুজনিত নানা রোগে শিশুরা কাবু হচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের। শিশু চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার ও ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিশুই ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত। ফ্লুকে ডেঙ্গু ভেবেও অনেকের মাঝে ছড়াচ্ছে নতুন ভীতি। সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য বিভাগে। 

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরের মধ্যে গত দুই মাসেই রেকর্ডসংখ্যক মানুষের শরীরে মিলেছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব। এরই মধ্যে কয়েক শিশুও মারা গেছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শিশুরা ভাইরাল ফ্লুজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দীন সবুজ বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে হঠাৎ করে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ভাইরাল ফ্লুজনিত কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ও ব্যক্তিগত চেম্বারে অনেক শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। আক্রান্ত অনেকের শরীরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মিলছে ডেঙ্গুর অস্তিত্বও। অনেক রোগী জ্বরকে অবহেলা করে বিলম্বে চিকিৎসকের কাছে আসছে। ততদিনে শরীরে জ্বরের সঙ্গে আরও নতুন রোগ বাসা বেঁধে ফেলে।

কিন্তু শুরুতেই চিকিৎসা নিলে সমস্যা জটিল হতো না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে কাবু হচ্ছে শিশুরা। এখন শিশুদের বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। রক্ষা করতে হবে ধুলাবালি থেকে। খাবারে অরুচি দেখা দিচ্ছে কিনা সেটিও নজর রাখতে হবে।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বেড়েছে এ ধরনের রোগীর চাপ। ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে হওয়ায় আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে রোগীর সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখানে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিনের ব্যবধানে ভাইরাল ফ্লুজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, বিশেষায়িত মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। সঙ্গে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার ও ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কয়েকগুণ বেড়েছে শিশু রোগীর চাপ। হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশু রোগী।

মা ও শিশু হাসপাতালের রোগী তামান্না তাসনিমের বাবা আলী আহমদ বলেন,  কয়েকদিন ধরে জ্বর হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক বলছেন, ভাইরাল ফ্লু। প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করা হয়েছে। জ্বর এখনো কমেনি। সন্তান নিয়ে তাই দুশ্চিন্তায় আছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর