বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নির্বাচন ঘিরে শব্দ-বায়ুদুষণে হুমকিতে জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

নির্বাচন ঘিরে শব্দ-বায়ুদুষণে হুমকিতে জনজীবন

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে শব্দদূষণের মাত্রা বেড়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বায়ুদূষণ। এসব কারণে এখানকার প্রকৃতি ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, সাধারণত মানুষের কথা বলায় শব্দের মাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত হয়ে থাকে। মানুষের কান সাধারণত শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে। এটা ৮০ ডেসিবেলের বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রসিক নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারণার শব্দের মাত্রা ৮০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে গেছে। যদিও পরিবেশ অধিদফতর বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে এ আইন বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেই। রংপুরে বায়ুদূষণের উৎসগুলো সম্পর্কে জানা গেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঘন ঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, যানবাহন থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের পার্টিকুলেট ম্যাটার, অ্যাশ, ধূলিকণা, সিসা, কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডগুলো এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু। চিকিৎসকদের মতে, বায়ুদূষণের ফলে নাক-মুখ জ্বালাপোড়া, মাথা ঝিম ঝিম, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানা রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে। জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন ৩৩ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পুরনো ১৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ১৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয় না। ফলে এসব বর্জ্য পচে-গলে দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে বাযুদূষণ করছে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের আবর্জনা, শিল্প কারখানা হতে উৎপাদিত আবর্জনা, রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, কসাইখানার রক্ত এসব বর্জ্যরে অন্যতম উৎস। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখায় বাতাস ও মাটি দূষিত হচ্ছে।

আশপাশে দুর্গন্ধের পাশাপাশি দেখা যায় মশা, মাছি ও পোকামাকড়ের মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলোর অবস্থা হয় আরও ভয়াবহ। এ ছাড়া নগরীতে প্রতিদিন আড়াই টনের ওপর ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এ বর্জ্যরে  সামান্যই অপসারণ করা হয়। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য জনজীবনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ।

প্লাস্টিক ও পলিথিনে দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা হলেও এর রোধ সম্ভব হয়নি। প্রতিনিয়ত রংপুরসহ আশপাশে লাখ লাখ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চললেও প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবসা বন্ধ করা যায়নি। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হলে পাট, কাগজ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করছেন নগরবাসী। নদীতে বর্ষা মৌসুমে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করায় এতে দ্রুত পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয়টি নদ-নদীসহ জেলায় ৫০টির বেশি নদীতে পচা বর্জ্য থেকে তরল, দুর্গন্ধযুক্ত রস তৈরি হয়ে পানিবাহিত রোগ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটা, অবাধে সরকারি-বেসরকারি গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।

রংপুর পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, শব্দ ও বায়ুদূষণের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়া শব্দদূষণের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর