কুড়িগ্রামের এনামুল হক চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে সিপাহী পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেন ২০১৪ সালে। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। আর নিয়োগের জন্য তার লিখিত পরীক্ষা হয় গত ২২ ডিসেম্বর; যখন তার বয়স ৩০। দীর্ঘ আট বছরে তার চেহারায় এসেছে পরিবর্তন, পাল্টেছে শরীরের গঠন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তার বদলে অন্যকে দিয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ান। এতে শেষ রক্ষা হয়নি। মৌখিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এনামুল। শুধু এনামুল নয়; তার মতো ২৮ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। তাদের সবাই এনামুলের মতো অন্যজনকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার সময় অসঙ্গতি দেখা দেওয়ায় কাস্টমস কর্মকর্তারা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। তারা ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার চুক্তিতে অন্যকে দিয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ান। একই অভিযোগে লিখিত পরীক্ষার সময় ২২ ডিসেম্বর আরও সাতজনকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের যুগবম কমিশনার তারেক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৭ সালে সিপাহি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নানা জটিলতায় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘদিন পর পরীক্ষা হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ছবির সঙ্গে বর্তমান চেহারার অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র মূল প্রার্থীর বদলে অন্যজনকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছে।’ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা জানান, ৯৮ জন সিপাহি পদে ৩ হাজার ৩৪৪ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিল।
এর মধ্যে গত ২২ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৫০ জন প্রার্থী গত সোমবার, মঙ্গলবার ও গতকাল মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। মৌখিক পরীক্ষার সময় লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রের সঙ্গে হাতের লেখা মিল না থাকায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা লিখিত পরীক্ষার খাতায় লেখা কোনো প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিতে পারেনি। টাকায় বিনিময়ে অন্যকে দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে বলে স্বীকার করে। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর একই কায়দায় লিখিত পরীক্ষা দিতে গিয়ে আরও সাতজন ধরা পড়েন। তাদের খুলশী থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রোজিনা খাতুন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বুলবুল আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।শুধু কাস্টমস হাউজ নয়; সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অন্য বেশ কয়েকটি দফতরে নিয়োগেও একই ধরনের জালিয়তি সামনে আসছে। এরমধ্যে ১৭ ডিসেম্বর জেলা ‘পরিবার পরিকল্পনা সহকারী’ পদে একই কায়দায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন নিজাম উদ্দিন নামের এক পরীক্ষার্থী। ২৫ জুলাই জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েন মুজিবুর রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী। ১ জুন একই কার্যালয়ে ‘অফিস সহায়ক’ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় একই ধরনের জালিয়তির অপরাধে ১০ জনকে কারাদণ্ড এবং পাঁচজনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় আরও ২১ জন পালিয়ে যায়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষায় একই ধরনের অপরাধের জন্য বেশ কয়জনকে আটক করা হয়। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব দফতরে নিয়োগে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় এই প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল হয়ে যায়, তাই নিয়োগে সময় লাগে। এই সুযোগে কিছু চক্র নানা ধরনের জালিয়তির আশ্রয় নেয়।