মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুলনায় ২৭ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে

নিয়মিত মহড়া দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় ২৭ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে

সারা দেশে হঠাৎ করেই বিভিন্ন মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেড়েছে। এ অবস্থায় খুুলনার ছোট-বড় ২৭টি মার্কেটও অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মার্কেটের মধ্যে অপেক্ষাকৃত সরু চলাচলের পথ, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ ও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকির কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে এসব মার্কেটের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি মার্কেট সংশ্লিষ্টদেরও কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সচেতনামূলক প্রচারণা, নিয়মিত মহড়া ও যে কোনো ধরনের আগুন প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা পশ্চিম রূপসার পাইকারি মাছ বাজারে অগ্নিকান্ডে র ঘটনায় ৪০টি আড়ত ও পাশের আরও ১০টি বসতবাড়ি ভস্মীভূত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ডাকবাংলা এলাকায় রহিমা শপিং কমপ্লেক্সে চতুর্থ তলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডে র ঘটনা ঘটে। এ ভবনটির সিঁড়ি অপেক্ষাকৃত সরু ও চারপাশে সারি সারি দোকান থাকায় পানি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে চতুর্থ তলার জানালার কাচ ভেঙে সেখান থেকে ভিতরে পানি দেওয়া হয়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর খুলনা বড় বাজারে অগ্নিকান্ডে  সাতটি পাইকারি দোকানঘর পুড়ে যায়। বাজারের সড়কগুলো সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। পরে ভৈরব নদীপথে পানি নিয়ে বিকল্প উপায়ে আগুন নেভানো হয়। সময়মতো আগুন নেভানো সম্ভব না হওয়ায় দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাততলা বা তদূর্ধ্ব ভবনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ থেকে আলাদা সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু যেন তেনভাবে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ ভবনে আগুন নির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ফলে ৯৫ শতাংশ বিপণিবিতান, বহুতল ভবন ও বস্তি এলাকার মানুষ রয়েছেন অগ্নিঝুঁঁকিতে। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ বহুতল ভবন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি। আবাসিক ভবনে, বাজার এলাকায় পানির কোনো রিজার্ভার নেই। ফায়ার সার্ভিস বা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। কেডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, সাততলা ভবন বা তদূর্ধ্ব ভবনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ থেকে আলাদা সার্টিফিকেট নিতে হয়। সেখানে বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকবে। সিঁড়িতে ফায়ার প্রোটেকশন ডোর (অগ্নিপ্রতিরোধক দরজা), ফায়ার অ্যালার্মিং সিস্টেম ও প্রতি তলায় ফায়ার এক্সিটিংগুইসার (ছোট সিলিন্ডার) থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ভবনে এ ধরনের ব্যবস্থা নেই।

খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, আগুন প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আগুন লাগলে তা কীভাবে নেভানো হবে তার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এখানে নদী ছাড়া পানির তেমন উৎস নেই। সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পানির রিজার্ভার তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা শহরে থাকা ২৭টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে আগুন প্রতিরোধে প্রতিদিনই মহড়া দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডে র ঘটনা হালকাভাবে নেওয়ার মতো নয় জানিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি মার্কেট সংশ্লিষ্টদের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে যে কোনো ধরনের আগুন প্রতিরোধে মার্কেটগুলোয় রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর