বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, নিহতের সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে মৃত্যুর (নিহতের) তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত হত্যা ও নির্যাতনের অমানবিক কর্মকান্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশটা আজকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে এই সরকার। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব অভিযোগ করেন। বিএনপির এই মুখপত্র বলেন, হত্যা করা নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে যে, গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়নি।
অথচ শিশু আহাদ, সামীর থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পথচারী সবাই গুলিতে নিহত হয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করেছে। একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিরীহ ছাত্রছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদের নির্যাতন করা হবে না। অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করল- তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরঞ্চ তাদের নিয়ে সরকার মায়া কান্না করছে।
মির্জা ফখরুল বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, সারা দেশে ৯ হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরুদ্দিন ওয়াসিমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং তাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতা-কর্মী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫-৭ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। জেলখানার ভিতরেও নেতা-কর্মীদের নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে। যা অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থি। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ।
বিবৃতিতে তিনি কৃষক দলের সহসাধারণ সম্পাদক লে. (অব.) ড. হারুনুর রশিদ ভুইয়াকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতা-কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।