চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে মারাত্মক লোডশেডিং। বিরতি দিয়ে প্রায় পুরো দিনই কমবেশি চলছে এ পরিস্থিতি। ভোররাত, মধ্যরাত কিংবা যখন-তখন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন নগরবাসী। অব্যাহত লোডশেডিংয়ে ভোগান্তির পাশাপাশি নগরবাসীর দৈনন্দিন কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্পকারখানাগুলো পড়েছে নানামুখী সংকটে, ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এদিকে, বিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম মৃধা দাবি করেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে কাঁচামালের সংকটের সমাধানের পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ির দুুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বিউবো সূত্র জানায়, গত বুধবার চট্টগ্রামে ১ হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয় ১ হাজার ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পরদিন বৃহস্পতিবার ১ হাজার ১৯০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয় ৮৫০ মেগাওয়াট। এর আগের দুই দিন এবং পরবর্তী দিনগুলোতেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিউবোর কর্মকর্তারা।
এদিকে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বন্দরনগরীর সাধারণ নাগরিকরা পড়েছেন মারাত্মক ভোগান্তিতে। বিশেষ করে নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, চকবাজার, আন্দরকিল্লাহ, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এসব এলাকায় বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না। পাশাপাশি নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নগরীর হালিশহর এলাকার কাপড়ের দোকানি সাজ্জাদ আলম বলেন, ‘রাত ২টা-৩টার দিকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। কখনো আবার ভোরে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে গরমে শিশুদের ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আবার বিদ্যুৎ না থাকলে দোকানে কাস্টমাররাও অস্বস্তি বোধ করেন।’ মিরসরাই উপজেলার কমরআলী এলাকার বাসিন্দা জাবেদ হোসেন বলেন, ‘গত কদিন ধরে রাত ১০টার পর প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। দিনের বেলা কোনোভাবে ম্যানেজ করা গেলেও রাতে বিদ্যুৎ গেলে বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।’ কাজীর দেউড়ি এলাকায় স্টেশনারি বিক্রেতা রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘আমার দোকানে ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজের কাজ হয়। লোডশেডিংয়ে কোনোভাবেই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎসংকটের জরুরি সমাধান দরকার’
এদিকে, বিদ্যুতের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নগরীর ক্ষুদ্র, মাঝারিশিল্প এবং বেশকিছু গার্মেন্ট কারখানায়ও উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। নগরীর কর্নেলহাট এলাকার একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি ধর বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেডিং হলে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি। কিন্তু বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কোনো রুটিন নেই। ফলে যন্ত্রপাতি ক্ষতির পাশাপাশি জেনারেটর ব্যবহার করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহেও বাড়তি সময় লাগছে।’