পারিবারিক ও সামাজিক সুদৃঢ় বন্ধনে সিলেটের সুখ্যাতি রয়েছে। অতিথিপরায়ণ হিসেবেও সিলেটবাসীর সুনাম দেশজুড়ে। কিন্তু হঠাৎ শান্তির জনপদ সিলেট হয়ে উঠেছে রক্তাক্ত। স্বজনরাই যেন হয়ে উঠেছেন ‘ঘাতক’। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছেলের হাতে বাবা, ভাতিজার আঘাতে চাচা কিংবা ভাইয়ের হন্তারক হয়ে উঠছেন ভাই। সিলেট বিভাগে গত দেড় মাসে অন্তত ২০টি হত্যাকা ঘটেছে। এসব প্রাণহানির বেশির ভাগই ঘটেছে তুচ্ছ ঘটনায় স্বজনদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ায় দিনদিন এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে বাড়ছে লোভ, স্বার্থপরতা। কমছে পরমতসহিষ্ণুতা। এজন্যই ছোটখাটো ঘটনায়ও স্বজনের প্রাণ কেড়ে নিতে মানুষ দ্বিতীয়বার ভাবছে না।
৮ মে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের শিলাকুড়ি গ্রামে গরুর সবজি খাওয়া কেন্দ্র করে ভাতিজার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারান চাচা সামছুল হক (৫০)। একই রকম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২৮ এপ্রিল একই উপজেলায়। ওই দিন ইছাকলস ইউনিয়নের বাগজোড় গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে বড় ভাইয়ের কেঁচির আঘাতে প্রাণ হারান মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী ছোট ভাই রুবেল আহমদ। বড় ভাই হন্তারক হয়ে ওঠায় ছোট ভাই রুবেলের আর প্রবাসে ফিরে যাওয়া হয়নি। গেল কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক খুনের ঘটনা ঘটে ২৮ মার্চ গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। ওই দিন প্রবাসফেরত ছেলের দায়ের কোপে খুন হন দুলু মিয়া। ১৬ এপ্রিল সিলেট সদর উপজেলার লুসাইন গ্রামে ছোট ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারান বড় ভাই মুজিবুর রহমান।
এদিকে সিলেটে হঠাৎ পারিবারিক বিরোধ ও খুনাখুনি বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজসচেতন ব্যক্তিরা। মানবাধিকারকর্মী ও ‘মানুষের জন্য’ সংগঠনের প্রধান সংগঠক জুনেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সত্যি বলতে মানুষের মধ্য থেকে মানবতাবোধ কমে গেছে। সামান্য স্বার্থের জন্য মানুষ একে অন্যকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না। সিলেটে এ রকম পরিস্থিতি আগে ছিল না। পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতির যে সুনাম ছিল কয়েক বছর ধরে তা নষ্ট হতে চলেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘সমাজে অপরাধপ্রবণতা কিংবা পারিবারিক কলহের অন্যতম কারণ আমাদের সমাজব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয় ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব। পারিবারিক শিক্ষার অভাব এবং যান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা দিনদিন আমাদের মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলছে।