রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আন্দোলন কর্মসূচিতে হামলার পর তিন মাসেও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পরিস্থিতি সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির কারণে ১ মে সাবেক ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে অন্তর্বর্তী ভিসি হিসেবে ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এবার সেই অন্তর্বর্তী ভিসির প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে তাঁকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ভিসি নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
এদিকে তিন দিন ধরে দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ভিসি মো. হযরত আলী ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে গতকাল তাঁর ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত গাড়িটি ঢাকা থেকে খালি ফিরে আসায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। তিনি কবে নাগাদ ক্যাম্পাসে ফিরবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারিক কার্যক্রম ভিসির একক সিদ্ধান্তে আটকে আছে। শিক্ষক সমিতি দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানালেও প্রশাসন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি অবজ্ঞা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল না থাকা ও অভিভাবকের দায়িত্বে থেকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় ভিসির প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতি মনে করে ভিসি হিসেবে তিনি (ড. মো. হযরত আলী) দায়িত্ব পালনে অক্ষম। ভিসি একক সিদ্ধান্তে শিক্ষক লাঞ্ছিত ঘটনার বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন না করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন। শৃঙ্খলা কমিটি শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় অভিযুক্তদের শোকজ করেছে। এখন নিয়মানুযায়ী বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। এসব কারণে শিক্ষক সমিতি তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন এবং অতিদ্রুত তাঁকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানান, সাবেক ভিসি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন। এসব কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো বিবাদ নেই। আমরা বারবার তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালুর কথা বলেছি। কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। উপরন্তু সিন্ডিকেট যে ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে তাদের আবার নতুন করে শোকজ করা হয়েছে। ফলে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কৌশলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বড় ধরনের সেশনজট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।