চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২০০ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি নগরীতে ঘটেছে শতাধিকের কাছাকাছি। তবে এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা একেক সংস্থার তথ্য একেক রকম। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনার পাশপাাশি রাস্তা পারাপার ও গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার বেশির ভাগই ঘটনার জন্য দায়ী ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন ও অদক্ষ চালক। তবে নগরীর ঘটনার জন্য পথচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের তথ্যমতে জেলায় গত ছয় মাসে ২০০ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৩ জন এবং আহত হয়েছেন ২৮৮ জনের মতো। তবে জেলা পুলিশের তথ্য মতে, দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩৫টি এবং নিহত হয়েছেন ১৩২ জন। অপরদিকে নগরীতে বিআরটিএর দুই সার্কেলের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭১টি এবং নিহত হয়েছেন ৬৬ জন। কিন্তু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৮ জন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫৮টি। বিআরটি সূত্র জানায়, জেলায় মার্চ মাসে ২২ জন, এপ্রিলে ৩৩ জন, মে মাসে ৩৩ জন, জুনে ৩৪ জন, জুলাইতে ৩০ জন এবং আগস্টে ২৯ জন মোট ১৮১ জন নিহত হয়েছেন। মেট্রো এলাকায় মার্চে ৯ জন, এপ্রিলে ৮ জন, মে-তে ১৪ জন, জুলাইয়ে ১২ জন এবং আগস্টে ১২ জন মোট ৬৬ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো স্বল্প বেতনের জন্য অদক্ষ চালক নিয়োগ করাতে এমন দুর্ঘটনা দিনদিন বাড়ছে।
প্রতিটি গাড়িতে দক্ষ চালক নিয়োগ করলেই দুর্ঘটনা কমে আসবে। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর অদক্ষ চালকের হাতে স্ট্রিয়ারিং তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শুধু লাইসেন্স করানোর সময় ডোপ টেস্ট করালে হবে না। লাইসেন্স তল্লাশির মতো মাঝেমধ্যে চেকপোস্ট বসিয়ে র্যাপিড ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার জলুয়ার দিঘির পাড় এলাকায় পূরবী পরিবহনের একটি বাস ও টাইলস বোঝাই পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিকআপচালক নিহত হন। একই দিন উপজেলার গৈড়লার টেক এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় লেগুনার চাপায় নিহত হন শের মোহাম্মদ (৬০) নামে এক কৃষক। ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় শিশুসহ দুজন নিহত হয়। গত ৮ এপ্রিল নগরীর লালখানবাজারে রিয়া মজুমদার নামের এক চাকরিজীবী তরুণী একটি বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি বাসের নিচে চাপা পড়েন। অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরার পথে এমন মৃত্যু হয় এই তরুণীর। গত ১৮ আগস্ট ভোরে নগরের সিটি গেটে পিকআপ-কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।