দেশের শিল্প খাতের প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই)। এ খাতে ১ কোটি ১৮ লাখের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ৩২ শতাংশের বেশি। এসব উদ্যোক্তাদের প্রায় বেশির ভাগ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। কিন্তু এই খাতের ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রযুক্তির বাইরে। তথ্য নেই, দিকনির্দেশনা নেই, দক্ষতা তৈরির সুযোগও সীমিত হওয়ায় আধুনিক ব্যবসা থেকে পিছিয়ে তারা। এতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার ঘাটতিতে প্রতি বছর উৎপাদনশীলতা কমছে। বিশ্বব্যাংকের ‘এন্টারপ্রাইজ সার্ভে’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাত্র ১২% এসএমই ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে, যেখানে ভিয়েতনামে ৪১% আর ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫%। এই ব্যবধানের মূল কারণ সরকারের প্রযুক্তি উদ্যোগ, কর নীতি ও দক্ষতা উন্নয়নে ঘাটতি। এসএমই ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ উদ্যোক্তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন নন, আর ৬৬ শতাংশ জানেন না কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস বা আইওটি ব্যবসায় কাজে লাগতে পারে। এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, তাদের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, যাদের ৬০%-ই নারী-উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তারা এসএমই খাতের বড় অংশ হলেও তাঁরাই সবচেয়ে প্রযুক্তিবঞ্চিত। ডিজিটাল লেনদেন, ই-কমার্স বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসার দক্ষতা বহুজনেরই নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫% এসএমই খাতে। এই খাতে ৩ কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত আছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। আর আমাদের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। এসএমইদের উন্নয়নে টেকসই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, বৈশ্বিক বাজারে পণ্য প্রসারের জন্য দেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে হবে। ইপিবিতে শিগগিরই রপ্তানি ইকো-সিস্টেম এবং সিএমএসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে। যেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অর্ন্তভুক্ত থাকবেন, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিশ্চিত হবে।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং আমাদের সিএমএসএমইদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড না থাকায় রপ্তানি কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না। অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে উদ্যোক্তাদের বসবাসের ঠিকানাকে ব্যবসায়িক ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।