প্রতিদিন আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তথ্য দিয়ে আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনা ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করছে। প্রাথমিকভাবে চীনে যখন এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল তখন এক লাখ মানুষকে আক্রান্ত করতে ভাইরাসের সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। এক লাখ থেকে দুই লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১১ দিন। আর তিন লাখে পৌঁছে গেছে মাত্র চার দিনে। শুধু তাই নয়, চীন থেকে ইউরোপে পৌঁছাতে যতটা সময় লেগেছিল এই ভাইরাসের, বাকি বিশ্বে ছড়াতে তার চেয়ে অনেক কম সময় লাগছে।
বস্তুত, এই মুহূর্তে কার্যত পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা সংক্রমণের খবর মিলছে। ইউরোপ এবং এশিয়ার মতো বহু আফ্রিকার দেশও লকডাউন এবং কারফিউ ঘোষণা করে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ জনের। মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৬২ হাজার জন। তবে এর মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
বহু টালবাহানার পর অবশেষে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যও। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। দেশের সমস্ত লোককে বাড়ি থেকে না বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের একাংশ বলছেন, আরও আগেই এই পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কারণ প্রতিদিনই সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। যুক্তরাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৩৩৫। মোট আক্রান্ত ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে ইতালিতে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। সোমবার ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে মোট মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেল। আক্রান্ত প্রায় ৬৪ হাজার মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালিতে মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। শনিবার সংখ্যাটি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। তারপর থেকে ধীরে ধীরে কমছে। যদিও এখনও সেখানে যত মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
উপমহাদেশের পরিস্থিতিও যথেষ্ট আশঙ্কার। ভারত এবং পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তুলনায় কম হলেও বাংলাদেশেও বাড়ছে আতঙ্ক।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে নিউজিল্যান্ডেও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ৫০ লাখ মানুষের স্বার্থে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শুরু হবে সেখানে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক তুরস্কেও।
সেখানেও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। মোট আক্রান্ত দেড় হাজারেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ২৯৩ জনের। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট করোনা সংক্রমণ আটকাতে এজলাসে বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানানো হয়েছে, বেশির ভাগ বিচারই এখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে। সওয়াল জবাবের পরে বিচারপতি রায়ও দেবেন ভিডিও কনফারেন্সেই। এদিকে ফ্রান্স করোনার সংক্রমণ আটকাতে একটি নতুন ডিক্রি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন আইনে দেশের নাগরিকরা বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে শরীর চর্চা করতে পারবেন। জগিং করতে পারবেন। কিন্তু তার চেয়ে দূরে যাওয়া যাবে না।
আমেরিকার অবস্থাও ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশের প্রতিটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। নিউজার্সি বেশকিছু কারাগারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন সেনা জানিয়েছে, নিউইয়র্ক এবং সিয়াটেলে দুইটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই দু'টি তৈরি হলে দেশের অন্য জায়গাগুলোতেও হাসপাতাল তৈরি হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, করোনার জেরে এবার অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার আর্জি জানালো ইরান। একই কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডও। রবিবার এই দাবি তুলেছিল কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড। সূত্র: ডয়চে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত