দেশে যখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক। বিভাগ ও জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সজাগ সরকারি, বেসরকারি কর্মচারি কর্মকর্তারা । শহরের অলি-গলি থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় পোস্টার, ফেস্টুন আর সভা সমাবেশ তখনো করোনাভাইরাস সম্পর্কে ধারণা নেই উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরের মানুষের মাঝে। সচেতন তো দূরের কথা করোনা সম্পর্কে কোনো ধারণাই তাদের নেই। তাদের সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগেরও তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।
অজ্ঞ-অশিক্ষিত মানুষগুলো এখনো জানে না করোনা মোকাবেলায় কী করা উচিত। সচেতনতার অভাবে চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষেরা এখনো অসচেতনভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রাম-গঞ্জে।
জেলার চররাজপুর, চরখুনিয়াগাছ, হরিণের চওড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, এসব চরের অধিকাংশ মানুষ এখনো অসচেতনভাবেই চলাফেরা করছে। এখানে প্রায় অর্ধশত চরাঞ্চলে হাজার হাজার পরিবারের বসবাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নিত্য লড়াই করে চলা চরাঞ্চলের মানুষ ব্যস্ত রয়েছে নিজেদের জীবিকার কাজে। চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষদের করোনা মোকাবিলায় সচেতন করা না হলে মহামারি আকার ধারণ করবে এ জনপদে।
হরিণের চওড়া চরের কৃষক বাতেন মিয়া বলেন, হামার গ্রামাত সরকারি কোনো লোকে আইসে নাই। খালি মানুষের মুখে মুখে শুনি কিসের করোনা নাকি আছছে। কী করা লাগবে কায়োতো কয় নাই, তা হামরা জানমো কেমন করি।
চররাজপুরের ওমর আলী বলেন, বাজারত শুনছি কীসের বলে ভাইরাস আইসেছোল। কোনটে বলে এক সাতোত হওয়ায় যারা ফির ভাল করি হাত ধোয়া নাগবে। হামার এদি এইগলা কী আর সগায় জানে। মাইকোত কউলে সবায় শুনিল হয়। মানিল হয়।
তাদের দাবি, শহরের বাসিন্দাদের মতো চরাঞ্চলের মানুষকে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদের খাদ্য নিশ্চিত করে চলাফেরা বন্ধ করে দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়াও সীমান্তবর্তী এ জেলার প্রায় ২৬ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়াহীন ভারতীয় সীমান্ত। লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষ অবৈধ পথে চোরাচালান বা শ্রমিকের কাজে ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। এদের মধ্যে অনেকে ভারত বাংলাদেশ দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান। করোনা পরিস্থিতিতেও অনেকে ভারতে যাতায়াতের আগের মতোই স্বাভাবিক রেখেছেন। যার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে করোনা ঝুঁকিতে আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
তিস্তা চরাঞ্চল গোবর্দ্ধন গ্রামের স্কুল শিক্ষক কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ করোনা তো বোঝেই না। স্বাস্থ্য সচেতনও নয়। খেটে খাওয়া মানুষজন জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন এবং চলাফেরায়ও নেই সীমাবদ্ধতা। করোনা সচেতনতার কথা বলতে গেলে এসব মানুষের ধারণা, ভয়ে ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। এই বৃহত্তর চরবাসীকে সচেতন করতে না পারলে করোনা ভাইরাসে বড় খেসারত দিতে হতে পারে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নিমর্লেন্দু রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনসচেতনতার জন্য মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য বার্তার লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মাইকিং করলে আতঙ্কিত হতে পারে তাই করা হচ্ছে না। ৯৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে ও ভারতফেরত একজনকে পাটগ্রাম হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। করোনার আইসোলেশন বাড়াতে লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল ও লালমনিরহাট সরকারি কলেজের নবনির্মিত মহিলা হোস্টেল চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট রয়েছে। যা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তৌহিদুল আলম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সীমান্তবাসীকে সীমান্ত অতিক্রম না করাতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সভায়ও বলা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় জেলাবাসীর সচেতনতা বাড়াতে লিফলেটের পাশাপাশি মাইকিং করা হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে স্বাস্থ্য বার্তা মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন