বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। এই মহামারীতে করোনা নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও বিলিয়নিয়ার বিল গেটস। নিচে তার উদ্ধৃতিগুলো তুলে ধরা হলো :
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী করি যে, ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছুর পেছনে একটি আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য রয়েছে। যা আমরা যা দেখেছি তার ভালো বা খারাপ দুটি দিক রয়েছে।
আমি এটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি। করোনা বা কোভিড -১৯ ভাইরাস সত্যিই আমাদের সাথে কী করছে তা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
এই ভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা সবাই সমান। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা, আর্থিক পরিস্থিতি বা আমরা কতটা বিখ্যাত তা এখানে কোনো বিষয় নয়।
এই রোগটি আমাদের সকলের সাথে সমানভাবে আচরণ করছে। আমাদেরও এমনটা করা উচিত। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তবে কেবল টম হ্যাঙ্কসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন (এই ভাইরাস তাকেও ছাড়েনি)।
এই ভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা সবাই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এটা এমন বিষয় যা একজন ব্যক্তির ওপর যেমন প্রভাব ফেলে অন্যের ওপরও একইরকম প্রভাব ফেলে।
এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা যে মিথ্যা সীমানাগুলো ধারণ করি সেগুলোর খুব কম মূল্য রয়েছে। কারণ এই ভাইরাসের পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। এই দুনিয়াতে যাদের পুরোজীবন নিপীড়নে কেটেছে তাদের ওপর যে আমরা অত্যাচার করেছি এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
করোনা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি কত মূল্যবান। কীভাবে আমরা রাসায়নিকের সাথে দূষিত পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার এবং পানীয়র মিশ্রণ করে জীবনকে চালিত করেছি। আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন না নিই, তবে আমরা অবশ্যই অসুস্থ হয়ে পড়ব।
এটি আমাদের জীবনের সংক্ষিপ্ততা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তা হলো, একে অপরকে, বিশেষত যারা বৃদ্ধ বা অসুস্থ তাদের সহায়তা করা আমাদের উদ্দেশ্য।
সমাজ কীভাবে বস্তুবাদী হয়ে উঠেছে এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের প্রয়োজনীয় খাবারগুলো (খাদ্য, জল, ওষুধ) এবং বিলাসিতাগুলোর কখনও কখনও অযথা মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি আমাদের পরিবার এবং গৃহজীবন কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা একে কতটা অবহেলা করেছি তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটি আমাদের বাড়ীতে ফিরে যেতে বাধ্য করছে যাতে আমরা সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করতে পারি এবং আমাদের পারিবারের একতাকে শক্তিশালী করতে পারি।
এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদের আসল কাজটি আমাদের কাজ নয়, আমরা যা করি তা তৈরি করে না। আমাদের আসল কাজ একে অপরকে দেখাশোনা করা, একে অপরকে রক্ষা করা এবং একে অপরের দ্বারা উপকৃত হওয়া।
এটি আমাদের উদ্বিগ্নতার বিষয়গুলো পরীক্ষা করে রাখতে আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা যতটা নিজেদের দুর্দান্ত মনে করি বা অন্যরা আমাদের কতটা দুর্দান্ত মনে করে সেটা কোনো বিষয় না। একটি ভাইরাস আমাদের বিশ্বকে স্থবিরতায় নিয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, মুক্তির শক্তি আমাদের হাতে। আমাদের একে অপরকে সহযোগিতা করা, শেয়ার করে নেওয়া-দেওয়া উচিত। আমাদের উচিত স্বার্থপর না হওয়া, নিজেদের যত্ন নেওয়া। প্রকৃতপক্ষে, এটি আমাদের আসল রঙ বের করে দিচ্ছে (সরূপ চিনিয়ে দিচ্ছে)।
এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা ধৈর্য ধরতে পারি কিংবা আতঙ্কিত হতে পারি। আমরা হয় বুঝতে পারি যে এই ধরণের পরিস্থিতি ইতিহাসে আগে বহুবার হয়েছিল এবং শেষ হয়ে যাবে। অথবা আমরা আতঙ্কিত হয়ে একে বিশ্বের সমাপ্তি হিসাবে দেখতে পারি। ফলস্বরূপ, আমাদের ভালোর চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে।
এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এটি হয় শেষ হতে পারে বা নতুন শুরু হতে পারে। এটি এমন একটি সময় হতে পারে, যখন আমরা আমাদের ভুলগুলি থেকে শিখি। কিংবা এটি একটি চক্রের শুরু হতে পারে।
এই ভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এই পৃথিবী অসুস্থ। আমাদের প্রয়োজন বনাঞ্চলের পরিমাণকে বৃদ্ধি করা। এরচেয়ে বেশি প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ করা।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
বিডি-প্রতিদিন/শফিক