মসজিদে অনুষ্ঠিত তাবলীগ জামাতের একটি ইজতেমা থেকে পুরো মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৯৬ জন, মারা গেছেন ১৯ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯৯ জন। এ ভাইরাস ঠেকাতে মালয়েশিয়ায় চলছে লকডাউন। দেশটিতে প্রথমে চীনফেরত, পরে একটি তাবলীগ জামাতের জমায়েতকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস।
তাবলীগ জামাতের ওই ইজতেমাটিতে ১৬ হাজার মুসলিম অংশ নেন। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ ছিল রোহিঙ্গা। ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়া ওই মসজিদটি থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও। তাই ওই জামাতে অংশ নেয়া চার হাজার লোককে খুঁজছে দেশটির পুলিশ।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক পার্লামেন্ট সদস্যের সংস্পর্শে আসার পর স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যান মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। এখন তিনি শঙ্কা মুক্ত।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে প্রতিরোধের জন্য সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) জারি করে। সবাইকে গৃহে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এক সঙ্গে চলাফেরা করা, রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে বসে খাওয়া, কর্মস্থলে যাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করছে। গত ১৮ মার্চ থেকে চলছে লকডাউন। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। চলমান লকডাউনে আইন অমান্যকারী ২৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ দিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় তাবলীগ জামাতে ৩০টি দেশ থেকে ১৬ হাজার মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৪ হাজার জনকে খুঁজছে পুলিশ।
মালয়েশিয়ার সিনিয়র মন্ত্রী (সিকিউরিটি) দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব জানান, তাবলীগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের বিস্তারিত সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তাদের খুঁজতে শুরু করেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ৩ হাজার ৮শ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছি। ওই তালিকায় মালয়েশিয়ান নাগরিকরা ছাড়াও রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক। তবে তার মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা তাবলীগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অনুরোধ করছি, তা না হলে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করবে। ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশ তাবলীগে অংশগ্রহণকারী। এর মধ্যে নিহত ৮ জনই তাবলীগ জামাতে অংশ নিয়েছিলেন।
মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী, ১৪ দিন (১৮ থেকে ৩১ মার্চ) কোম্পানি বন্ধ থাকলেও বেতন দিতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার এবং বেতন না দিলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। দেশি ও বিদেশি সব কর্মীদের জন্য এ ঘোষণা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দূতাবাস, হাইকমিশন থেকেও নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে দিচ্ছে এবং চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করছে। ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এ রোগ গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ রোগ গোপন না করে বরং চিকিৎসা নিলে ভালো বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম