১৩ জুলাই, ২০২০ ২০:৫৫

এক মিনিটে ৭১ জনকে করোনায় আক্রান্ত করেছেন এই ‘সুপারস্প্রেডার’!

অনলাইন ডেস্ক

এক মিনিটে ৭১ জনকে করোনায় আক্রান্ত করেছেন এই ‘সুপারস্প্রেডার’!

প্রতীকী ছবি

করোনার উপসর্গ তার মধ্যে ছিল না। শরীরে যে করোনার বাসা বেঁধেছিল, তা তিনি নিজেও জানতেন না। তবে লিফটে চড়ার পরই সব কিছু পাল্টে যায়। মাত্র ৬০ সেকেন্ডে মোট ৭১ জন তারপর থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

তার শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল না। বাইরে থেকে ফেরার পর নিজেকে ঘরবন্দিই করে রেখেছিলেন ওই নারী। নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরও হননি তিনি। খাবারও আনছিলেন বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে। কিন্তু লিফটে চড়তেই তার থেকে দ্রুতহারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অন্যের শরীরে।

নভেল করোনাভাইরাস কীভাবে, কত তাড়াতাড়ি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়ে ফেলে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এটি। 

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোলের নয়া সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রত্যেক ট্রাভেলারের মধ্যে উপসর্গহীন করোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা যে ভাইরাসের অন্যতম বাহক, তারা তা বুঝতে পারছেন না। আর এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সমস্য়া। এর জেরেই করোনার সংক্রমণের বিস্তার দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা সবাই এতদিনে জেনেছি যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। যার মাধ্যমে শরীর থেকে ড্রপলেট বেড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমে প্রকাশ না করলে, পরে স্বীকার করে নিয়েছে যে, করোনা বর্তমানে বায়ুর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে করোনার মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধতা কতটা কাজে দিচ্ছে তাতে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কারণ করোনায় বায়ুবাহিত হয়ে পড়ায় এর শেষ কোথায় তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিজ্ঞানীরাই।

এরই মধ্যে উপসর্গহীন করোনা রোগীই বর্তমানে করোনা মোকবিলার সবচেয়ে বড় ও বিধ্বংসী অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার দ্বিতীয় দফার ছোবলে ফের লকডাউনের ঘোষণা করেছে শ্রীলংকা, সিউল, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসহ বহু দেশ।

সুপারস্প্রেডার

সিডিসি স্টাডির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি, চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে করোনাভাইরাসের গভীর যোগাযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহের আগে পর্যন্ত চীনের ওই প্রদেশের নামই নাকি সামনে আসেনি। ২ এপ্রিলে, দুজন ব্যক্তির স্ট্রোক হলে করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো সামনে আসে। কিন্তু তার আগে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কোনও পরীক্ষা তাদের করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হলে তার সঙ্গে তিন ছেলেই পশে ছিলেন। তার থেকে অজান্তেই ওই হাসপাতলের তিন চিকিত্‍সক-সহ মোট ২৮ জন নার্সরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রামিত হয়ে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, করোনা পরীক্ষার আগেও ওই ব্যক্তি আরও একটি হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন। তার পাশাপাশি মোট ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হোন। এইভাবেই ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। এত জনের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসনের। 

অন্য আরেক ব্যক্তির শরীরে মেলে করোনাভাইরাসের লক্ষণ। তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করার পরই জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ। তবে প্রথম রোগীর মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ নজরে না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস।

তবে শুধু হাসপাতালেই নয়, করোনা আক্রান্ত ও তার তিন ছেলে বাজারহাট সবই করেছেন। সেইসময় লকডাউন জারি করা হয়নি কোনও প্রদেশেই। ফলে কড়াকড়িও ছিল না। দেদার ঘুড়ে বেড়িয়েছেন যেখানে-সেখানে। পরিবারের সকলে আক্রান্ত তো হয়েছেন বটেই, এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস। পরিস্থিতি শোচনীয় দেখে মার্চের ২৬ থেকে শুরু হয় লকডাউন। আর তারপর তো গোটাটাই ইতিহাস।

সূত্র: এইসময়।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর