বরিশাল বিভাগের প্রায় এক কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ার পরপরই গত মার্চে এই হাসপাতালের একটি বর্ধিত ভবনে দেড়শ’ শয্যার একটি নতুন করোনা ওয়ার্ড চালু করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখানে চিকিৎসা বলতে কিছু নেই। সময় মতো অক্সিজেন পাওয়া যায় না। রোগী মরে গেলেও ডেকে পাওয়া যায় না ডাক্তার-নার্স। কেউ ডাকতে কক্ষে গেলে তাদের সাথে ডাক্তার-নার্সরা চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। খাবারের মানও যাচ্ছে তাই। শারীরিক দূরত্ব বলতে কিছু নেই। বাথরুমও নোংরা। মহামারী করোনা যুদ্ধে জিততে সেবার মান বাড়ানোসহ ডাক্তার-নার্সদের আরও আন্তরিক এবং সহনশীল হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রত্যাশিত সেবা দিতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন মেডিকেলের পরিচালক।
করোনা ওয়ার্ডে কাগজে কলমে দেড়শ’ শয্যা হলেও রোগী সংখ্যা শতাধিক হলেই অনেককে থাকতে হয় ওয়ার্ডের মেঝেতে গা ঘেষা হয়ে। এখানে শারীরিক দূরত্ব বলতে কিছু নেই। এ কারণে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া অনেকেই এই ওয়ার্ডে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার ওয়ার্ডের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা না করায় সুস্থ হওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে।
মুমূর্ষু রোগীর জন্য জরুরি মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। অক্সিজেন দেয়াসহ রোগীর সংকটকালে ডাক্তার-নার্স ডাকলেও তারা আসেন না। কেউ ডাক্তার-নার্স ডাকতে তাদের কক্ষে গেলে তারা চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হন।
ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেয়া অনেকেই বলছেন, শের-ই বাংলার করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা বলতে কিছু নেই। শুধু অক্সিজেন সাপোর্ট পাওয়ার জন্যই শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখানে ভর্তি হন। কিন্তু তাও জোটে না তাদের ভাগ্যে। এ কারণে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেককে।
ওয়ার্ডের পরিবেশ-টয়লেট-বাথরুম নোংরা, দুর্গন্ধময়। বাধ্য হয়ে রোগীদের পরিষ্কার করতে হয় টয়লেট-বাথরুম। ওয়ার্ডে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নানা কারণে গত ৪ মাসে এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন ১৪৯ জন। এর মধ্যে ৫৫ জনের করোনা ছিল পজেটিভ।
করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসায় ডাক্তার-নার্সদের আরও আন্তরিক হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। সোমবার পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১০২ জন রোগী। গত ১৭ মার্চ চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩২ জন রোগী। করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট নন তাদের অনেকেই।
করোনা ওয়ার্ডে ডাক্তার-নার্সরা রোগীদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছেন না বলে দায় স্বীকার করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। এ জন্য একমাত্র জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন তিনি। সংকটের মধ্যেও চেষ্টা করে যাওয়ার কথা বলেন পরিচালক।
২০১০ সালে ৫শ’ শয্যার শের-ই বাংলা মেডিকেলে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি এখনও। ৫শ’ শয্যার জনবলেও রয়েছে ঘাটতি। এ কারণে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে শের-ই বাংলা মেডিকেলের চিকিৎসা সেবা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা