জুলাই মাসের ৩১টি দিনই ভয়ংকর হয়ে থাকল চট্টগ্রামের জন্য। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থাবা প্রকট আকার ধারণ করল মাসটিতে। গত এক মাসে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭২ জন এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ১৬২ জন।
প্রতিদিন গড়ে রোগী মারা গেছেন প্রায় ৯ জন এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৯ জনের বেশি। জুলাই মাসে যে পরিমাণ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তা গত তিন মাসের সমান। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়ংকর থাবা চট্টগ্রাম নগর ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে ১৫ উপজেলায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাস থেকেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে। কিন্তু এপ্রিল মাস থেকে জুলাই মাসে শনাক্ত এবং মৃত্যু দুটিই কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরো এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ২৮৪ জন। কিন্তু জুলাই মাসে হয় ২৪ হাজার ১৬২ জন। এপ্রিলে মৃত্যু হয় ১৩৭ জন। গত মে মাসে আক্রান্ত হয় ৯ হাজার ৬৬২ জন ও মৃত্যু হয় ১৩২ জন এবং জুন মাসে আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৮১৯ ও মৃত্যু হয় ১৮১ জনের। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে মোট মারা গেছেন ৯৭৩ জন।
মেডিকেল চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়াই স্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম যখন দেশে এসেছে মানুষ তখন খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। অথচ এ ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের হার এ পর্যন্ত পাওয়া সব ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ও তীব্র। পক্ষান্তরে প্রথম দিকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি। এখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ধারণার চেয়েও ভয়ংকরভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে। সংক্রমণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বা সতর্ক ছিলাম না। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতেও পুরোপুরি অসচেতন। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার আগের সব ভ্যারিয়েন্টকে হার মানিয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত জুলাই মাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোর বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিরবেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং আক্রান্ত করেছে। এখন সামাজিক সংক্রমণ চলছে। এরপরও মানুষ যদি একটু সচেতন না হয়, তাহলে সামনে আরও মারাত্মক বিপদ অপেক্ষা করছে। এখনও হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ। একটি শয্যার জন্য দৌড়াদৌড়ি চলছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ জন এবং নতুন করে শনাক্ত হয় ৯২৭ জন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হন ৮২ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৬২ হাজার ৮৮ জন এবং উপজেলায় ২০ হাজার ৯৭৮ জন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন ৯৭৩ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৫৮৩ জন ও উপজেলায় ৩৯০ জন। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ১১টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চলছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই