শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাঙনের কবলে চার গ্রাম

যমুনায় বিলীন বসতভিটা ।। তীররক্ষা বাঁধে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

ভাঙনের কবলে চার গ্রাম

যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চার গ্রাম। চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের ৫ শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামগুলো হলো চরদলিকা, হাটবাড়ী, কাশিরপাড়া ও শিমুলতাইড়। জানা যায়, একসময় সারিয়াকান্দি থেকে বেশ দূরে ছিল যমুনা নদী। গ্রামগুলোর অব্যাহত ভাঙনের কারণে কয়েক দশকে নদী উপজেলা সদরের কাছে চলে এসেছে। উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চরদলিকা গ্রাম গত দুই মাসের ব্যবধানে সম্পূর্ণ নদীর পেটে চলে গেছে। এ গ্রামের লোকজন ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন। গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরদলিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে যমুনায় ইউনিয়নের হাটবাড়ী গ্রামের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েক দিনে এ গ্রাম ছেড়েছে ৮০টি পরিবার। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের মুখে। ইউনিয়নের কাশিরপাড়ার বেশির ভাগ বসতভিটা নদীতে ধসে যাচ্ছে। এ গ্রামের ৬০ পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। এ গ্রামের ভাঙ্গরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি নদীতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর। শিমুলতাইড় গ্রামেও যমুনা আক্রোশ চালাচ্ছে সমানতালে। এ পর্যন্ত গ্রামের ৫০টির বেশি পরিবার হারিয়েছে ভিটামাটি। নিরুপায় হয়ে অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামটির একটি মসজিদও ভেঙে গেছে। শিমুলতাইড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখ থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে। চরদলিকা গ্রামের ৯০ বছরের বৃদ্ধ সাহেব আলী বলেন, ‘চরের বসতভিটা হাজারবার ভাঙলেও কোনো দিন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকার এমন কোনো মানুষ নাই যার বসতভিটা একাধিকবার ভাঙেনি। তাদের স্বজনদের কবরের ঠিকানা নাই। আমি নিজেও কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছি।’ চালুয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, জীবনে তার বাড়ি ভেঙেছে ১১ বার। ২০১৭ সালে বাড়ি করেছেন সুজাতপুর চরে। এ চরেই এখন বসবাস করছেন। ইউনিয়নের ভাঙনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য এবং ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকায় জিআরের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ওই এলাকায় সর্বোচ্চ ত্রাণ সহায়তার জন্য চেষ্টা চালছে।’ বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে এখনো কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আগামীতে প্রকল্প প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।’ এদিকে ধুনট উপজেলায় বানিয়াজান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০ মিটার স্পার যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল সকালে প্রবল স্রোতে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ওই স্পারটির উত্তর পাশের ২০ মিটার অংশের সিসি ব্লক ধসে যায়। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডেও (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, সেখানে ঠিকাদার পাঠানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। বগুড়া-৫ আসনের এমপি হাবিবর রহমান, ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত, ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, স্পারটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া। এ ছাড়া যমুনায় বালু উত্তোলন বন্ধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে অর্ধশত বালু ব্যবাসায়ীকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর