মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ভারত। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে পাকিস্তানও। পাকিস্তান দাবি করে, তাদের পাল্টা জবাবে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান। আর বাকি দুটি হলো- মিগ-২৯ ও এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানের দাবি, চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান দিয়ে এগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে।
আর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত-পাকিস্তানের এই সংঘাতে চীন ও ফ্রান্সের তৈরি যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি সংঘর্ষ বা ডগফাইট ভবিষ্যতের সামরিক কৌশল নির্ধারণে বৈশ্বিকভাবে গভীর আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বুধবার সংঘর্ষ চলাকালে চীনের তৈরি একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ফ্রান্সের তৈরি ভারতের দুটি সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন কর্মকর্তা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাকে বেইজিংয়ের জন্য একটি সম্ভাব্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে তাদের উন্নত যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির কার্যকারিতা প্রমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে।
এই ধরনের সংঘর্ষে যুদ্ধবিমান, পাইলটের কৌশল এবং আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা সরাসরি পরখ করার বিরল সুযোগ তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এই সংঘর্ষ ঘিরে তথ্য সংগ্রহে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, যারা তাইওয়ান বা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা এই সংঘর্ষের কৌশল, প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহারের বাস্তব তথ্য বিশ্লেষণ করবে।
রয়টার্সকে দেওয়া বিবৃতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তান এই অভিযানে চীনে তৈরি জেএফ-১৭ নয়, বরং অপেক্ষাকৃত উন্নত জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। এছাড়া ভারতের যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারেও তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল বেশ দৃঢ়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চীনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র, যার সঙ্গে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি এমবিডিএ কর্তৃক তৈরি রাডার-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনা করা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই সংঘাতে এসব অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইআইএসএস) সামরিক বিমান বিশেষজ্ঞ ডগলাস ব্যারি বলেন, এ সংঘাতে ব্যবহৃত কৌশল, অস্ত্রসজ্জা এবং কোন প্রযুক্তি কার্যকর ছিল আর কোনটি নয়- তা নিয়ে যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহে আগ্রহ দেখাবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, এখানে আপনি বলতে পারেন পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রের বিপরীতে চীনের সবচেয়ে সক্ষম অস্ত্র মুখোমুখি হয়েছে। যদিও এসব অস্ত্র আসলে ব্যবহার হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ব্যারির মতে, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও রাফাল যুদ্ধবিমান নির্মাতা দাসোঁ অ্যাভিয়েশন তাতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কনসোর্টিয়াম এমবিডিএ-এর সঙ্গে ফরাসি সরকারি ছুটির দিনে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ